Skip to content Skip to footer

স্যুররিয়ালিস্ট গুরু: ইয়ান সভাঙ্কমায়েরের সঙ্গে আলাপচারিতা

ভাষান্তর ও সম্পাদনা: মাহমুদ আলম বাপ্পী 

চেক চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে সবচেয়ে ব্যতিক্রমধর্মী এবং প্রভাবশালীদের একজন ইয়ান সভাঙ্কমায়ের। ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে দর্শক, আন্তর্জাতিক কাল্ট-সম্প্রদায় এবং অগণিত শিল্পীদের অনুপ্রাণিত, অভিভূত করে চলেছে তাঁর চলচ্চিত্র। স্বদেশি এবং সমসাময়িক পরিচালক মাইলোস ফোরম্যান বলেন, সভাঙ্কমায়ের হলো ডিজনি আর বুনুয়েলের মিশ্রণ। প্রকৃতপক্ষে, ফোরম্যানের এই সমীকরণকে সম্প্রসারিত করলে তাতে আন্দ্রে ব্রেতো, আইজেন্সটাইন, ফেলিনির মতো স্যুররিয়ালিস্টদের নামও অন্তর্ভুক্ত হয়।

সভাঙ্কমায়েরের জন্ম ১৯৩৪ সালে। চেকোস্লোভাকিয়ার প্রাগ শহরে। কাকতালীয়ভাবে এ বছরই জন্ম চেক স্যুররিয়ালিস্ট গ্রুপের। দীর্ঘ জীবনে তিনি পুঁজিবাদী চেক প্রজাতন্ত্রের উত্থান-পতন কাছ থেকে দেখেছেন, ছয়-ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থার আসা-যাওয়া দেখেছেন। এ কারণেই সম্ভবত তাঁর কাজগুলোতে মোটাদাগে বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনার ছাপ পাওয়া যায়।

তাঁর প্রায় ত্রিশটি চলচ্চিত্রে লাইভ-অ্যাকশন, পাপেট, কোলাজ, হাতে আঁকা অ্যানিমেশন, মন্তাজ, ক্লে অ্যান্ড অবজেক্ট স্টপ-মোশন অ্যানিমেশন—একই সমন্বয়ে এবং কন্ট্রাস্টে তাঁর কাজের মধ্যে মিশেছে। যদিও তাঁর বেশিরভাগ চলচ্চিত্রই অ্যানিমেটেড, তবুও সভাঙ্কমায়ের নিজেকে একজন অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রকার হিসেবে মানতে নারাজ। কিংবা কোনো নির্দিষ্ট ধরন শিল্পী হিসেবেও তিনি নিজেকে মানতে চান না। “অ্যানিমেটররা একটা আবদ্ধ জগতে থাকতে বদ্ধপরিকর: অনেকটা শৌখিন ঘুঘু অথবা খরগোশ পলকের মত”—অ্যানিমেশন নিয়ে এক আলাপচারিতায় সভাঙ্কমায়ের বলেছিলেন। তিনি জানান, “আমি কখনই নিজেকে অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রকার বলব না কারণ আমি অ্যানিমেশন টেকনিক অথবা একটা পূর্ণ ইল্যুশন তৈরিতে ইচ্ছুক নই। আমি জীবনকে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারের মাঝেই খুঁজে পেতে চাই।”

সভাঙ্কমায়েরের কাজ হল গিয়ে নিত্যনৈমিত্তিক জিনিসে প্রাণদান করা। কেউ চাইলেই তাঁর চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত প্রতীকগুলোর অর্থ নিয়ে অভিধান লিখে ফেলতে পারেন, ফ্রয়েড এর Interpretation of Dreams এর মতো। তাঁর চলচ্চিত্রে মাছ থেকে শুরু করে ঘুরতে থাকা পিন, চাবি, পাথর আর ওয়ারড্রোব ক্লোজেট পর্যন্ত, নিত্যদিনের তুচ্ছ বস্তুগুলোই আবেগ আর ভাবনার মেটাফোর হিসেবে নতুন নতুন মানে প্রকাশ করে।

ডাইমেনশনস অব ডায়ালগ চলচ্চিত্রটি ১৯৮৩ সালে অ্যানেসি অ্যানিমেশন ফেস্টিভালে গ্র্যান্ড প্রাইজ অর্জন করায় তাঁর প্রতি আন্তর্জাতিক মহল কৌতূহলী হয়ে ওঠে। সান ফ্রানসিসকো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উপর সভাঙ্কমায়েরকে ‘গোল্ডেন গেইট পারসিস্টেন্স অব ভিশন অ্যাওয়ার্ড’ দিয়ে সম্মানীত করে। তাঁর স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলো এবং নতুন পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র কন্সপিরেটরস অব প্লেজার (১৯৯৬) উত্তর অমেরিকায় প্রদর্শিত হয়। ‘পারসিস্টেন্স অব ভিশন অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়ার পরের অনুভূতি সম্পর্কে বলেন অ্যাওয়ার্ডের নামটি তাঁর বেশ মনে ধরেছে। তিনি জানান, “এটা পেয়ে আমার ভালো লাগছে কারণ এটা কোনো সরকারি অ্যাওয়ার্ড না। কম্যুনিস্টরা আমাকে একটা সম্মানসূচক অ্যাওয়ার্ড দিতে চেয়েছিল, আমি তা প্রত্যাখ্যান করি।”

ডাইমেনশনস অব ডায়ালগ 

কন্সপিরেটরস অব প্লেজার (১৯৯৬) চলচ্চিত্রটি আমাদেরকে নিয়ে যায় সাধারণ মানুষ—অ্যাপার্টমেন্টবাসী, সংবাদপাঠক, ম্যাগাজিন বিক্রেতা, ডাকহরকরার ব্যক্তিগত জীবনের গোপন কুঠুরিতে মানুষের বৈচিত্র‍্যময় যৌনাকাঙ্ক্ষার সামনে। আপনি যদি নাকের ভেতর, কানের ভেতর রুটুর বল ঢুকিয়ে রাখা বা পায়ের পাতায় মাছের কামড় খাওয়া উপভোগ করেন, সিনেমাটা হয়তো আপনাকে নিয়েই!

কন্সপিরেটরস অব প্লেজার

সভাঙ্কমায়েরের জাদুকরী দক্ষতাটি হল চলচ্চিত্রে এমন শব্দ-চিত্রের উপস্থাপন, যেন দর্শক ভেতরকার বিষয়গুলোকে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে অনুভব করতে পারেন, এমনকি স্বাদ-গন্ধ নেয়ার অনুভূতিও যেন পান। তাঁর এই অতিরঞ্জিত, অতিবাস্তবিক শব্দের ব্যবহার এবং আইজেনস্টাইনধর্মী সম্পাদনা যেকোনো রহস্যময় দৃশ্যকে যেন আরও রহস্যময় করে তোলে। তিনি বলেন “আমি একটা হাত। আমার ছয়টা জালের মতো আঙুল। নখের বদলে আমার আছে ছোটছোট ধারালো আর ক্ষুধার্ত জিভ যা দিয়ে আমি সারা দুনিয়া চেটে চেটে বেড়াই।”

১৯৭২-৭৯ দীর্ঘ ৭ বছর তিনি ভাস্কর্য, সিরামিক্স, কাব্য এবং অন্যান্য স্থির শিল্পকর্মের দিকে মনোযোগ দেন। এ সময় অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রে ‘স্পর্শ’ অথবা ‘ট্যাকটাইল’ নিয়ে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। যেমন ডাইমেনশনস অব ডায়লগ-এ উত্তেজনায়, আলিঙ্গনে প্রেমীদের মাটি-কাদার নরম শরীর গলে একাকার হয়ে যায়। একাকার হয় হাতের সাথে হাত, ঠোঁটের সাথে ঠোঁট। আবার কাম-প্রেম শেষে পরক্ষণেই অপ্রত্যাশিত পরিণতিতে হতাশা আর ক্রোধে নিজেদের একদম শেষ করে ফেলে তারা। সিনেমাটি অত্যন্ত জীবন্ত মনে হয় । একই রকম ডার্কনেস, লাইট, ডার্কনেস কিংবা লাঞ্চ অথবা ব্রেকফাস্ট—এসব স্বল্পদৈর্ঘ্য অ্যানিমেটেড সিনেমাগুলোতে অনুভূতি ও ইন্দ্রিয়ের ব্যবহার এদের অসম্ভব জ্যান্ত করে তোলে। স্পর্শের অভিব্যক্তি ও চমকপ্রদ উপস্থাপন অনুধাবন করা সহজ হবে যদি আমরা সভাঙ্কমায়েরকে একজন চলচ্চিত্রকার হিসেবে না দেখে একজন চেক পরাবাস্তববাদী হিসেবে ভাবি, যিনি স্পর্শ নিয়ে নিরীক্ষা করেন।

চলচ্চিত্রের জন্য বেশি পরিচিত হলেও, তাঁর স্থির শিল্পকর্ম এবং কবিতায় স্পর্শের শক্তি সবচেয়ে বেশি উপলব্ধি হয়। ১৯৭৪-১৯৮৩ সালের ভেতর তাঁর আঁকা ছবি এবং লেখা কবিতায় তিনি ট্যাকটাইল নিয়ে গভীর এক্সপেরিমেন্ট করেছেন।

Spread your fingers as far apart as possible Place between them the grain of a pea

Endure

Knees kneeling down on a grater

Endure

Slip a sucking sweet in your mouth

Suck

Your back pressed against the smooth concrete of

a laundry

Endure

One’s heels placed into the outflow by the bath

just as the plug has been pulled

Endure

Calves painted with egg yolk

let it dry

and endure 

Run water in the basin

Shoes off

Dip your face

Endure

প্রদত্ত কবিতাটির নাম “Economical Suicide“, ১৯৭৯ সালে সভাঙ্কমায়েরের লেখা, তাঁর স্ত্রীকে উৎসর্গ করে যিনি নিজেও একজন চিত্রশিল্পী এবং ভাস্কর ছিলেন।

সাক্ষাৎকার

১৯৭০ সালের দিকে আপনি স্পর্শ নিয়ে যেসব নিরীক্ষামূলক কাজ করেন তার সাথে কন্সপিরেটরস অব প্লেজার সিনেমার মিল পাওয়া যায়। সিনেমাটি কি ওই সময়েরই?

সভাঙ্কমায়ের: সিনেমার চিত্রনাট্যটি সেই সময়ের দিকেই মাথায় এসেছিল, ভিন্ন নামে। স্পর্শ নিয়ে গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এসব আমি একটু পরে শুরু করি, ১৯৭৪ এর দিকে।

ইয়ান সভাঙ্কমায়েরের

আমার মতে কন্সপিরেটরস অব প্লেজার এখন পর্যন্ত আপনার নির্মিত সবচেয়ে সুররিয়ালিস্ট চলচ্চিত্র……

সভাঙ্কমায়েরর: একদম ঠিক ধরেছেন। এ ছবিতে সুররিয়ালিজম এর সবচাইতে প্রগাঢ় উপাদানগুলো রয়েছে।

কেন?

সভাঙ্কমায়ের: কন্সপিরেটরস আসলে মুক্তি এবং মুক্তি পাবার সিনেমা। এটা কোনো শিল্প নয়, এটা একটা চলচ্চিত্র। ঠিক এজন্যই, উদাহরণ হিসেবে আন্দ্রে ব্রেতো “স্যুররিয়ালিস্টিক চিত্রকর্ম” বলতেন না। তিনি বলতেন, “চিত্রকর্মে স্যুররিয়ালিজম”। একইভাবে, আমি চলচ্চিত্রে স্যুররিয়ালিজম নিয়ে বলি। স্যুররিয়ালিজম হলো মনস্তত্ত্ব, এটা একটা আধ্যাত্মিক পন্থা, কিন্তু নান্দনিক নয়। স্যুররিয়ালিজম আসলে কোনো প্রকার নান্দনিকতা সৃষ্টি করতে চায় না। ভিন্ন ভিন্ন শিল্পীর নিকট একটা উপাদান হিসেবে এর নিঃসরণ ঘটেছে, কিন্তু আদতে এর কোনো অস্তিত্ব নেই।

আপনার কাজে যেটা লক্ষণীয়ভাবে বিদ্যমান সেটা অস্তিত্বহীন হয় কীভাবে?

সভাঙ্কমায়ের: স্যুররিয়ালিজম এর অস্তিত্ব আছে, তবে এটা কোন শিল্পকর্মের রূপ নয়। স্যুররিয়েলিজমকে চিহ্নিত করার জন্য আপনি বলতে পারেন এটা বিংশ শতাব্দীর রোমান্টিক আন্দোলন। প্রতিটি রোমান্টিক সময়কাল তিনটি উপাদান অভিব্যক্ত করে: প্রেম, মুক্তি আর কাব্য। প্রতিটি প্রজন্ম তাদের সময়কার পরিবেশ এবং সময় অনুসারে তাদের নিজ শৈল্পিক অভিব্যক্তির সন্ধান করছে। একবিংশ শতাব্দীর রোমান্টিসিজমও সেই একই প্রশ্ন রাখবে। এই রোমান্টিসিজম কালচারালিজম হবে, না অন্যকিছু হবে- সেটা ব্যাপার না।

চলচ্চিত্রগুলোর ফ্যান্টাসি বাস্তবায়নে আপনি অ্যানিমেশন ব্যবহার করেছেন। এসব ছোট ছোট অংশে অ্যানিমেশন কী ভূমিকা পালন করে?

সভাঙ্কমায়ের: সিকোয়েন্সে অ্যানিমেশন ব্যবহার করা হয়েছে যেখানে চরিত্রগুলোর চাহিদানুযায়ী কৃত্রিম যৌনসঙ্গীর দৃশ্যায়ন হয়েছে; তবে দুজনের মধ্যকার যেসব সম্পর্ক নিজেদের পূর্ণ করে সেসব ঠিকই জ্যান্ত মানুষেরে দৃষ্টিকোণ থেকে নেয়া, একজন সঙ্গীর দৃষ্টিকোণ থেকে নেয়া। আমি উপলব্ধি করেছিলাম যে চরিত্রগুলো জলজ্যান্ত কোন মানুষকে চায়নি, বরং একটা প্রতিকৃতিকে চেয়েছে একটা অপ্রাকৃত সঙ্গীকে চেয়েছে। এসব ব্যাপারকে আমি কেবলমাত্র অ্যানিমেশন দিয়েই প্রাণবন্ত করতে পারতাম।

আপনার কি মনে হয়—এসব ফ্যান্টাসিগুলোকে আরো বেশি বাস্তবিক করেছে?

সভাঙ্কমায়ের: খেয়াল করলে দেখবেন, যে চরিত্রগুলো হাতে বানানো সেগুলো আসলে একেকটা বস্তু। আমি আামার সিনেমায় আরো অনেক প্রকারের বস্তু নিয়েও কাজ করেছি। যে চরিত্রটি মোরগঝুঁটি আর ছাতির ডাঁট পরে আছে সেটি কস্টিউমের সাহায্যে সজ্জিত। সে পুরোপুরি আলাদা ক্ষমতার অধিকারি হচ্ছে, উড়ছে, ভানুমতীর খেল দেখাচ্ছে ইত্যাদি। ডালপালায় আঘাত করা মাত্রই তার ছদ্মবেশ খুলে আসে এবং সাথে সাথেই সে ক্ষমতাবলহীন ছোট্ট একটা মানুষে পরিণত হচ্ছে ।

আপনার চোখে, সিনেমায় চরিত্রগুলোর মধ্যে কোনো একটিও কি একে অপরের প্রতি আকর্ষণ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল?

সভাঙ্কমায়ের:  আমার ইচ্ছা ছিলো তাদের আচরণে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য ঢুকিয়ে দেয়া যেন তারা নিজেদের না চিনলেও বুঝতে পারে যে তারা একই ধরনের মানুষ, যেমন একজন সমকামী আরেক সমকামীকে কিছু নির্দিষ্ট কারণে চিনতে পারে।

Faust Ges Conspirators-এ আপনি পুতুলগুলোর আকার বৃদ্ধি করেছেন। এই প্রমাণ সাইজের পুতুলগুলো আসলে কিসের প্রতিনিধিত্ব করছে?

সভাঙ্কমায়ের: আমি এর গুরুত্বকে বাড়িয়ে বলবো না। আমার ইচ্ছা ছিল পুতুলগুলোকে বাস্তবতায় নিয়ে আসা। আকার বৃদ্ধি করেছিলাম যাতে ওগুলো চরিত্রগুলোর সাথে সঠিক অনুপাতে থাকে। পুতুলগুলোকে তখন বেশ ছোট দেখবেন, যখন ওগুলো মানুষের হাতে পরিচালিত হয় আবার পরে ওগুলোকে পূর্ণাঙ্গরূপেও দেখবেন। তার মানে, আমরা বাস্তবতার এক আলাদা মাত্রায় পৌঁহাচ্ছি।

চার্লস বাওয়ার্সকে আপনি “বাস্তবতা আর আসল অ্যানিমেশনে আপনার সরাসরি পূর্বপুরুষ” বলেছেন। ওঁর সিনেমা প্রথম কবে দেখেছিলেন?

সভাঙ্কমায়ের: বাওয়ার্স এর সিনেমা প্রথম দেখি সত্তরের দশকে, আমার নিজের দ্য ফ্ল্যাট (১৯৬৮) এর কাজ শেষ করার পরে। চেক ফিল্ম আর্কাইভে বাওয়ার্সের দুইটি সিনেমা আছে। এই আর্কাইভের পরিচালক আমার সিনেমা দেখার পরে আমার সাথে যোগাযোগ করেন, আর বলেন, “আমি এমন কিছু নিয়ে এসেছি যাতে আপনার আগ্রহ থাকতে পারে”। সিনেমাগুলো দেখে বুঝলাম, আমি যা করছি তাতে তিনি আমার পূর্বপুরুষ। অ্যাকশন করতেন। কিন্তু শুধু কলাকৌশলের শর্তেই সামনে রে পূর্বপুরুষ। কারণ, তিনি আমার সিনেমা বানানোর অর্ধশত বছর আগেই অ্যানিমেশন মিক্সিং এবং লাইভ অ্যাকশক করতেন। আমি কিন্তু শুধু কলাকৌশলের শর্তেই এ কথা বলছি, সামগ্রিক অর্থে নয়। আমাদের দুজনের কাজের বিষয়বস্তু একেবারেই আলাদা। 

আপনার কি মনে হয় একবার বাওয়ার্সের কাজ দেখার পরে, তা আপনাকে প্রভাবিত করেছে?

সভাঙ্কমায়ের: না, অমন না। আমি কখনোই নিজেকে লাইভ অ্যাক্টিং এবং অ্যানিমেশন সমাহারে এর উদ্ভাবক হিসেবে ঘোষণা দিইনি। আমার শুধু এই ব্যাপারটা ভাল লেগেছিল যে, আমার অনেক আগেও একই চিন্তার একজন ছিল এবং তাঁর ক্ষেত্রেও এটা কাজ করেছে।

অ্যালিস (১৯৮৮) আর ফাউস্ট (১৯৯৮) এর আগ পর্যন্ত, আপনি প্রায় পুরোটা সময়ই অ্যানিমেশন নিয়ে কাজ করেছেন। লাইভ অ্যাকটরদের নিয়ে কাজ করতে কেমন লাগে?

সভাঙ্কমায়ের: এটা স্বীকার করতেই হবে যে, আমি কুশলীদের সাথে ঠিক ততোটাই কাজ করেছি যতটা স্থির বস্তু নিয়ে করেছি । আমার যে অমন নামডাকওয়ালা ভালো অভিনেতা দরকার হয় এমন না। তার চেয়ে বরং নির্দিষ্ট দৃশ্যে যাঁরা ঢুকে যেতে পারে তাঁদেরকেই নির্বাচন করি আমি। ক্যামেরা দিয়ে স্থির বস্তু হিসেবে তাঁদের ছবি তুলি। কখনো কখনো আমি কুশলীবদেরকে অ্যানিমেইট করি, যেমনটা ফাউস্ট-এ করেছিলাম।


চলচ্চিত্র ও অন্যান্য শিল্পকর্মে যেমন নির্মাণ, তেমনই বিভিন্ন কলাকৌশল নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রেও আপনি সব্যসাচী। এক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট ধারণাকে শিল্পে রূপান্তরের ক্ষেত্রে আপনি কীভাবে চিন্তা করেন?

সভাঙ্কমায়ের: আমার একান্ত আত্মোপলব্ধিকেই আমি নির্মাণ করি। এসব উপলব্ধি বা ধারণা মনের ভেতরে জমতে থাকে এবং বের হয়ে আসে। প্রত্যেকটি মানুষের ক্ষেত্রে এই একই বিষয় ঘটে। কেউ তা কোনো শিল্প মাধ্যমে প্রকাশ করে আবার কেউ প্রকাশ করার কোন মাধ্যম খুঁজে পায়না। বিশেষ দক্ষতা বা মেধা বলতে কিছু যে আছে- আমি তা মনে করিনা।

মেধা বলতে কিছুই নেই? এ তো বেশ দুঃসাহসিক কথা!

সভাঙ্কমায়ের: এই ধারণাটি খুবই সোজা। একজন শিল্পী যেভাবেই হোক না কেন সব প্রতিবন্ধকতা ছাপিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। কিন্তু একজন কেরানি তথাকথিত পেশাদারিত্বের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে নিজের শৈল্পিক অভিব্যক্তি অধিকাংশ সময়েই ফুটিয়ে তুলতে পারেন না, কারণ শিল্প সৃজনশীলতা থেকেও অনেক বেশি কলাকৌশল আর দক্ষতার ব্যাপার। কিন্তু যদি কেউ নিজেকে প্রকাশ করতে চায়, যদি সত্যিকার অর্থেই চায় তাহলে একটা উপায় খুঁজে বের করে ফেলেই।

সৃজনশীলতা আর আত্ম-অভিব্যক্তির উপর একপ্রকার জুলুম এর সময়ে আপনি বেড়ে উঠেও কীভাবে এসব প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে নিজের কাজটা ঠিকঠাকভাবে করে চলেছেন?

সভাঙ্কমায়ের: এটার উত্তর দেয়া বেশ মুশকিল। আমার বিশ্বাস এখানে পরিবারের প্রভাবসহ আরো কিছু ব্যাপার আছে। কিছু শিশুদেরকে সামলানো বেশ কঠিন। আমি অমন একজনই ছিলাম (হাসি)। আবার ধরুন, সব শিশুই আঁকতে পারে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এই ব্যাপারটা বড় হওয়া পর্যন্ত ধরে রাখে কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই অন্যান্য শিশুদের মাঝে এই ব্যাপারটা খুন হয়ে যায়।

আপনার দেশে কম্যুনিস্টদের শাসন শেষ হবার পরপর আপনার বানানো ক্যাথার্টিক সিনেমা দ্য ডেথ অব স্ট্যালিনিজম (১৯৯১) এর সাত বছর হয়ে গেল। এই স্বাধীনতা আপনার মতামত, আপনার সৃজনশীলতাকে কীভাবে পরিবর্তন করেছে?

সভাঙ্কমায়ের: আমি বলবো যে আমার সব সিনেমাই রাজনৈতিকভাবে বেশ প্রলিপ্ত। সভ্যতা যদি ফ্যাসিবাদ কিংবা স্তালিনবাদের মতো অসুস্থ ব্যাপারেও সৃষ্টি বা অস্তিত্বকে সমর্থন করে, তবে সেই পুরো সভ্যতাই অসুস্থ । কেবলমাত্র রাজনৈতিক কার্যকলাপের ভিত্তির ওপর মনোযোগ না দিয়ে আমি সবসময়ই এই সমস্যার মূল ভেদ করে ঢুকতে চেয়েছি। এ কারণেই হয়তো আমার সিনেমাগুলো সর্বজনীন। চেক প্রজাতন্ত্রের বাইরের দর্শকের সাথেও তা যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে । কেবল চেকোস্লোভাকিয়ায় রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে মানে এই না যে, পুরো বিশ্ব অথবা সভ্যতার পরিবর্তন হয়েছে।

মূল:

ওয়েন্ডি জ্যাকসন

সহ-সম্পাদক

এনিমেশন ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিন

(ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের নিয়মিত সাময়িকী ফ্ল্যাশব্যাক এর ‘পূর্ব ইউরোপীয় চলচ্চিত্র’ সংখ্যা থেকে সংকলিত)

Leave a comment