Skip to content Skip to footer

প্যারিস টেক্সাসের সন্ধিক্ষণে

নিউ জার্মান সিনেমার অন্যতম পরিচিত মুখ ভিম ভেন্ডার্স। চলচ্চিত্র নির্মাণের পাশাপাশি তিনি ফটোগ্রাফি, লেখালেখিতেও সিদ্ধহস্ত। প্যারিস, টেক্সাস (১৯৮৪) নিয়ে স্মৃতিচারণটি তারই সুলিখিত একটি বই ‘দ্য লজিক অব ইমেজেস’ থেকে নেয়া হয়েছে। শিরোনাম ছিল ‘লাইক ফ্লাইং ব্লাইন্ড উইদাউট ইনসট্রুমেন্ট’। ভাষান্তর করেছেন ফারিয়া রহমান।


গল্পটা একজন মানুষের যে কিনা হুট করেই মরুভূমিতে দৃশ্যমান হয় এবং সভ্যতায় ফিরে আসে।  

Film- Paris, Texas


শুটিং শুরুর আগে আমরা ইউএস-মেক্সিকো সীমান্তের পুরোটাই ঘুরে আসি, যা প্রায় ১৫০০ মাইলেরও বেশি। সব দেখে শেষমেষ আমরা টেক্সাসের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে ‘বিগ বেন্ড’ নামে এক জায়গায় শুটিং করার সিদ্ধান্ত নিলাম। বিগ বেন্ড একটি জাতীয় উদ্যান, এখানে চমৎকার সব পাহাড় আছে, আর মাঝ দিয়ে চলে গেছে রিও গ্রান্দে নদী। এটাই সেই নদী যেটা ‘ওয়েটব্যাকস’দের (আমেরিকায় মেক্সিকান অনুপ্রবেশকারীদের প্রচলিত নাম) সাঁতরাতে হয়। কিন্তু পরে আমরা সেখানে আর শুটিং করি না। কারণ যখন আমরা উপর থেকে জায়গাটা দেখছিলাম, হেলিকপ্টারের বৃদ্ধ চালক আমাদের জানায় একটু দূরেই ‘দ্য ডেভিল’স গ্রেভইয়ার্ড’ নামে একটা জায়গা আছে। এই জায়গাটুকুর হদিস আমাদের ম্যাপে পর্যন্ত নেই। কিন্তু গিয়ে দেখলাম এটি বিমূর্ত স্বপ্নের মতো সুন্দর, বিস্তৃত এক স্থান। ওখানে কোনো পুলিশ নেই, অভিবাসীরা সাঁতার কেটে সীমান্ত পার হলেও পানির অভাবে মরুভূমিতেই মারা যায়। তো এখানেই আমরা আমাদের সিনেমা শুরু করি; এখানেই আমরা প্রথমবারের মতো ট্র্যাভিসকে দেখতে পাই। সে ক্লান্তিতে যখন অজ্ঞান হয়ে যায় তখন তার ভাই তাকে নিতে আসে। প্রথমে তারা ম্যারাথন নামের একটি ছোট্ট গ্রামে যায়, যেখানে কুড়িখানেক বাড়িঘর ছিল। সেখানকার একটি হোটেলে ওয়াল্ট ট্র্যাভিসকে রেখে যায়, বের হয় কিছু জামা-কাপড় কিনতে। এসে দেখে তার ভাই আবারও উধাও। ওয়াল্ট আর ট্র্যাভিসের টেক্সাস থেকে লস এঞ্জেলেস যাওয়ার পথেই পড়ে পরের গন্তব্য ফোর্ট স্ট্যানটন, কয়েক হাজার মানুষের ছোট একটি শহর। আমরা আসলে এমনভাবে সিনেমাটি বানাতে চেয়েছিলাম যেখানে সব ধরনের আমেরিকান শহরের উপস্থিতি থাকবে। 

Film- Paris, Texas


এর মাঝে সবচেয়ে ছোট জায়গা ছিল গ্যাস স্টেশনটি, যেখানে ট্র্যাভিস অজ্ঞান হয়ে যায়। জায়গাটার নাম ক্যামেলট, রেকি করার সময় আমরা সেখানে থেমেছিলাম শুধু একটা কারণেই—নামটা বেশ মজার। এরপর এলো ম্যারাথন, ফোর্ট স্ট্যানটন, তারপর এল পাসো নামে একটি মাঝারি আকারের শহর এবং সব শেষে আসে লস এঞ্জেলেস মহানগর। ছবিতে আমি লস এঞ্জেলেসকে মহানগর হিসেবে দেখাইনি, বরং একটি বৃহৎ শহরতলী হিসেবে দেখাই।  সিনেমায় আপনি ঠিক ‘এলএ’ দেখতে পাবেন না। সত্যিকারের যে শহরটি দেখতে পাবেন তা হলো টেক্সাসের হিউস্টন। হিউস্টন আমার অন্যতম প্রিয় আমেরিকান শহর। তো, দেখতেই পাচ্ছেন, আমি সব ধরনের শহরই দেখানোর চেষ্টা করেছি। তবে অনেক দৃশ্যই কান্ট্রিসাইডে শুট করা হয়েছে।

Wim Wender directing Paris, Texas


আসলে আমি আরো একটু জটিল ধাঁচের সিনেমা বানাতে যাচ্ছিলাম, কারণ প্রথমে আমার পুরো আমেরিকা ঘুরে দেখানোর ইচ্ছে ছিল। আমি ভেবেছিলাম আলাস্কা হয়ে তারপরে মধ্য-পশ্চিম অঞ্চল এবং ক্যালিফোর্নিয়া ঘুরে টেক্সাসে ফিরে আসার কথা। আমি আসলেই পুরো আমেরিকার একটা আঁকাবাঁকা রুটের পরিকল্পনা করে ফেলেছিলাম।  

কিন্তু আমার চিত্রনাট্যকার স্যাম শেপার্ড তখন আমাকে থামায়। সে বলে, “এত জটিল পরিকল্পনা নিয়ে মাথা ঘামিও না। তুমি এক টেক্সাসেই পুরো আমেরিকাকে খুঁজে পাবে।” ঐ সময় আমার টেক্সাস নিয়ে খুব একটা ধারণা ছিল না। কিন্তু আমি স্যামের উপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। সে সময় মাস দুয়েক টেক্সাসের আশপাশে ঘুরাঘুরি করে আমিও স্যামের সাথে একমত হই। আমার সিনেমায় আমি যা কিছু চেয়েছিলাম তার সবই টেক্সাসে পাই, যেন আমেরিকার একটা ছোট সংস্করণ।   

Film- Paris, Texas


আমার বেশ কিছু সিনেমাই স্ক্রিপ্টের বদলে শুরু হয়েছে রোডম্যাপের মাধ্যমে। এটা অনেকটাই চোখ বন্ধ করে আকাশের ওড়ার মতো। সারারাত ওড়ার পর সকালে কোনো এক জায়গায় উপস্থিত হবেন। অর্থাৎ কোথাও নামবেন, যাতে ছবিটি শেষ হতে পারে। 


আমার মতে ছবিটি বেশ ভালো হয়েছে। বলা যায় আমার অন্যান্য ছবি থেকে এটি কিছুটা আলাদা। আরও একবার, আমরা ওড়া শুরু করেছিলাম, কিন্তু এবার যে জায়গায় নামতে চেয়েছিলাম ঠিক সেখানেই নেমেছি। শুরু থেকেই প্যারিস, টেক্সাস (১৯৮৪) এর একটা নির্দিষ্ট গতিপথ ছিল এবং ছিল এর চেয়েও সুনির্দিষ্ট গন্তব্য। এবং প্রথম থেকেই এটায় আমার অন্যান্য সিনেমা থেকে বেশি গল্প ছিল, এবং আমি এই গল্পই শেষতক বলতে চেয়েছি। 

Leave a comment