বিশ্ব চলচ্চিত্রের সমকালীন অন্যতম প্রভাবশালী নির্মাতা মিখাইল হ্যানেকে পরিচালিত ‘দ্য হোয়াইট রিবন’ ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত ৬২তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে জিতে নেয় ‘স্বর্ণপাম’। কারিন সাইফারের সাথে এই সাক্ষাৎকারটিতে হ্যানেকে বলেছেন গল্পের নেপথ্যের গল্প, সিনেমা হিসেবে দর্শকের কাছে ‘দ্য হোয়াইট রিবন’-এর দায়, নির্মাতার আদর্শিক অবস্থান, ভিজ্যুয়াল আর ন্যারেটিভ স্টাইল নিয়ে। সেই সাথে উঠে এসেছে শিশুদের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা, ভায়োলেন্স, রাজনীতি, দর্শন, মিডিয়া প্রসঙ্গসহ প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির নানা কথা। সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করেছেন সুমন্ত সরকার অর্পন।
আপনার কাজে সবসময়ই শিশুদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যায়, আর এই সিনেমায় শিশুরাই গল্পের সবচেয়ে বেশি জায়গা জুড়ে আছে। এটা কেন?
মিখাইল হ্যানেকে: আসলে মূল পরিকল্পনাটা ছিল এমন একদল শিশু-কিশোরদের নিয়ে সিনেমাটি বানানো, যারা তাদের কাছে প্রচারিত নীতি-আদর্শগুলোকে চূড়ান্ত বলে ধরে নেয়। তারপর শাস্তি দেয় সেইসব লোকদের, যারা নিজেরাই নিজেদের প্রচারিত আদর্শের খেলাফ করে। যখনই কোনো চিন্তাধারা, মতাদর্শ কিংবা ভাবাদর্শে রূপান্তরিত হয়, তখনই সেটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। শিশুরা সাধারণত তাদের যা বলা হয় তা খুব গুরুত্ব সহকারে নেয়, আর এটাই হয়ে উঠতে পারে বিপজ্জনক। দ্য হোয়াইট রিবন, সন্ত্রাসবাদের দিকে ধাবিত করে এমন সব পরিস্থিতি আর ঘটনাগুলো নিয়ে তৈরি নীরিক্ষামূলক একটি সিনেমা। আর ঠিক একারণেই এটা জার্মানির অতীতকে সামনে নিয়ে আসে, যেটা আমি আবারো জোর দিয়ে বলছি, কেবল একটি উদাহরণ মাত্র।
আমার কাছে যা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, সিনেমাটিকে যেন শুধু জার্মান ফ্যাসিবাদের আলোকে ব্যাখ্যা করা না হয়। এটা আরও ব্যাপকভাবে সব ধরনের উগ্রবাদের মূল অনুসন্ধানীমূলক একটি কাজ—হোক তা ডানপন্থী, বামপন্থী কিংবা ধর্মীয়।
অপরাধবোধ আপনার কাজের অপরিহার্য একটি প্রসঙ্গ, আর এই ছবির টাইটেল দ্য হোয়াইট রিবন যেন খোদ অপরাধবোধ থেকে মুক্তির প্রতীক—যা কিনা নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে অপরাধবোধ আর নির্দোষিতার মাঝে একটা পারস্পরিক ক্রিয়া নিয়ে কাজ করে।
হ্যানেকে: আমি শিশুদের নিষ্পাপ মনে করি না। শিশুরা নিষ্পাপ নয়, বরং বলা যায় ওরা সরল এবং ওদের মাঝে কোনো কিছু ঠিক যেভাবে বলা হয় সেভাবেই গ্রহণ করার প্রবণতা আছে। আপনি যখন আক্ষরিক অর্থে কোনো কিছু গ্রহণ করেন, তখন সেটা বিপজ্জনক হতে পারে। যেমনটা রাজনীতিবিদ আর আদর্শের জায়গা থেকে অসৎ লেখকেরা আমাদের বোঝাতে চান, দুনিয়াটা ঠিক তেমন ভালো আর মন্দে বিভক্ত নয়। এ কাজটাই জঁরা ফিল্মগুলো করে, আমাদের আশ্বস্ত করে যে আখেরে খারাপ কিছুই হবে না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে আর স্ববিরোধী বাস্তবতাকে নীরিক্ষা করতে আমি সবসময়ই সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। শিশুরা একেবারে নিষ্কলুষও নয়, আবার দানবও নয়; তারা বাকি সবার মতোই, এই দুইয়ের মাঝামাঝি কোথাও।

ছবিটির যে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তা বরাবরই মিডিয়া এবং সিনেমায় সমালোচনার বিষয়বস্তু ছিল, এক্ষেত্রে আপনাকেও এর মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
হ্যানেকে: আমি সবসময় চেষ্টা করি পর্দায় যা দেখানো হয় তার প্রতি দর্শকের একটা অবিশ্বাস তৈরি করতে। এটা খুব জোরালোভাবেই দ্য হোয়াইট রিবন-এর শুরুতেই প্রকাশ করা হয়, যখন কথক বলে “আমি আপনাদের যেই গল্প বলতে চলেছি তার সবটুকু সত্য কিনা জানিনা, কারণ এর অনেকটাই শোনা কথা।” সিনেমাটির গল্প অনেকটা স্ববিরোধী ভঙ্গিতে বলা—কথক নিজে যা দেখেছেন আমরা যে শুধু তাই দেখতে পাই তেমন কিন্তু না। সিনেমায় এমন দৃশ্যও আছে যেখানে তিনি ছিলেনই না।
এটা গল্পের শুরুতেই আমার এই ইঙ্গিত স্রেফ এটা বোঝানোর জন্য যে আমরা এখানে একেবারে বাস্তব তথ্যনির্ভর ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে কাজ করছি না, বরং কাজ করছি কারো সত্যকে পুনর্গঠনের একটি প্রয়াস নিয়ে। সিনেমাটি কখনোই এমন দাবি করে না যে—‘ঘটনাগুলো এরকমই ছিল।’
এটি আপনার প্রথম সিনেমা যেখানে বর্তমান নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নিয়ে গল্প সাজানো হয়েছে।
হ্যানেকে: এই সময়কালটা আমার উল্লেখ্য বিষয়বস্তুর সাথে প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়েছিল। প্রোটেস্ট্যান্টইজমের প্রতি আমার বরাবরই বিশেষ আগ্রহ ছিল। যেহেতু আমি নিজে একজন প্রোটেস্ট্যান্ট হিসেবে বেড়ে উঠেছি, যাদের সংখ্যা কিনা অস্ট্রিয়াতে খুব কম। আমার বাবা ছিলেন একজন জার্মান প্রোটেস্ট্যান্ট, আর মা অস্ট্রিয়ান ক্যাথলিক। প্রোটেস্ট্যান্টইজম শৈশবে আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। এছাড়াও নাৎসি জার্মানি আর জার্মান ফ্যাসিবাদ নিয়ে গাদা গাদা সিনেমা আছে, কিন্তু এর আগে যত ছবি এসেছে তার কোনোটাই দর্শককে ঘটনার গোড়ার দিকে নিয়ে যায় না অথবা পেছনের গল্পটা বলে না। আমার মনে হয় কীভাবে কাহিনির সূত্রপাত ঘটেছে সেটাও খুব ইন্টারেস্টিং। অবশ্যই সিনেমাটায় ফ্যাসিবাদের উত্থান নিয়ে সামগ্রিক কোনো বিশ্লেষণ নেই, এটা এর উদ্দেশ্যও না। কিন্তু ছবিটা অন্তত এর শেকড়ের দিকে তাকায়।
ভয়েস-ওভারের ব্যবহার কাহিনির ধারাবাহিকতায় অতিরিক্ত একটি মাত্রা যোগ করেছে, যেটা কিনা কখনো কখনো পর্দায় দেখানো ঘটনাগুলোর সাথে আবার কখনো এর বহু পরের কোনো ঘটনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এমন দ্বৈত-ন্যারেটিভ স্টাইল ব্যবহারের পেছনে উদ্দেশ্য কী ছিল?
হ্যানেকে: কারণ এতে এমন একটা দূরত্বের আবহ তৈরি করা গেছে যা ছবিটার বিষয়বস্তুর সাথে যায়। ঠিক যেমনটা হয়েছে সিনেমাটি সাদা-কালো হওয়াতে। কালার এখানে কৃত্রিম বাস্তবতা। ছবিটার গল্পে থিওডোর ফন্টেনের ন্যারেটিভ স্টাইলও প্রায় একইরকম প্রভাব ফেলে। ফলে গল্পটা যেভাবে এগিয়ে যায় তাতে করে সিনেমাটার প্রতি একটা একক দৃষ্টিভঙ্গি দাঁড় করানো সহজ হয়। এখানে গল্পের কথক একজন বৃদ্ধ, যিনি নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে অতীতের কিছু স্মৃতি রোমন্থন করছেন। তার বয়সের কথা ধরলে, তিনি হয়তো ফ্যাসিবাদও দেখেছেন, বাদউর-মাইনহফও দেখেছেন। উলরাইক মাইনহফ আর গুদরুন এনসলিঙ, দু’জনেই কিন্তু প্রোটেস্ট্যান্ট ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে উঠে আসা। আমি আবার এমনটা বলছি না যে প্রোটেস্ট্যান্টইজম রাজনৈতিক উগ্রবাদের জন্ম দেয়। তবে এটা সত্য যে প্রোটেস্ট্যান্টইজম তার চিন্তাধারা ও নীতি-নৈতিকতায় ক্যাথলিসিজমের চেয়ে অনেকটাই অনড়। ব্যাপারটা যে আবার অবধারিতভাবে খারাপ কিছু তাও না। কিন্তু যখন এটা চরম আদর্শে রূপান্তরিত হয়, তখন তা হয়ে উঠতে পারে ভয়ংকর।
সিনেমায় একদিকে আপনি দেখিয়েছেন গ্রামের বিষণ্ন পরিবেশ আর পারিবারিক সম্পর্কের শীতলতা, অন্যদিকে প্রকৃতির সৌন্দর্য আর প্রাচুর্য। এখানে একটা বৈপরিত্য দেখা গেছে।
হ্যানেকে: এটাই সিনেমাটির সবচেয়ে সুন্দর কিংবা সবচেয়ে বিষণ্ন দিক, সে আপনি যেভাবেই দেখুন। আমরা ধ্বংস না করলে প্রকৃতি সবসময়ই সুন্দর। আর হ্যাঁ, এই বৈপরিত্যের ব্যাপারটা নাটকীয়তার বিচারে খুবই কার্যকর। আমাদের ভেতরকার অন্ধকার শূন্যতা দেখানোর জন্য চারপাশের সবকিছুকেই নিরানন্দ ও অসুন্দর দেখাতে হবে, আমি এমনটা ভাবি না। আমি বরং মনে করি সিনেমার জন্যে পারিপার্শ্বিক উপাদানগুলোর দ্বান্দিক ব্যবহারের প্রয়োজন আছে।

প্রতিদিনকার ঘরোয়া জীবনের যে ইনসাইড শটগুলো, সেগুলো আপনি খুবই অল্প আলোতে নিয়েছেন। আপনার ক্যামেরাম্যান, ক্রিশ্চিয়ান বার্জারের সাথে কীভাবে কাজ করেছেন, আপনাদের ভিজ্যুয়াল কনসেপ্টটা কী ছিল?
হ্যানেকে: কখনো কখনো শুটিংয়ের জন্য আমরা কয়েকটা কেরোসিনের বাতি অথবা মোমের আলো ছাড়া আর কিছুই ব্যবহার করিনি। আমাদের কাছে যে সাদা-কালো ফিল্ম স্টক ছিল তা এ কাজ করার মতো যথেষ্ঠ আলোকসংবেদী ছিল না। এ কারণে আমরা কালার ফিল্ম দিয়ে শুট করে তারপর সাদা-কালোয় প্রিন্ট করি। ছবিটার গল্পের থিমের জন্যে সাদা-কালো একটা অপশন ছিল বটে, কিন্তু আমি এটাকে একেবারে আবশ্যক ধরে নিয়েই এগোই। প্রযোজকদের এ বিষয়টা বোঝাতেও অনেকটা সময় চলে যায়।
নান্দনিকতার দিকটা বাদ দিলেও, সাদা-কালোর আরেকটা বড় সুবিধা ছিল দৃশ্যকল্পের দিক থেকে। দৃশ্যগুলো বাস্তব মনে হলেও যার বড় একটা অংশ ছিল বানানো। ক্রিস্টফ ক্যান্টার যা কিছু বানিয়েছিলেন আর যেসব আগে থেকেই লোকেশনে মজুদ ছিল, এ দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্যের যে ব্যাপারটা, এটা রঙিন ফিল্মে ঠিক আসতো না। আবার সাদা-কালোর জন্য সাজ-সজ্জার কিছু সূক্ষ্ম ত্রুটিও ঢাকা পড়ে গেছে। এখন খুবই নিখুঁত মনে হয় এমন অনেক কিছুই দশ থেকে পনেরো বছর আগেও ডিজিটাল কারেকশন ছাড়া সম্ভব ছিল না। পোস্ট-প্রোডাকশনে আমরা প্রায় অনন্তকাল ধরে এগুলো ঠিক করেছি। পুরো সিনেমা জুড়ে কিন্তু ষাটটিরও বেশি ডিজিটাল ট্রিক রয়েছে। যেমন ধরুন, কান্ট্রি এস্টেটের বাড়ির যে ছাদগুলো দেখা গেছে, বাস্তবে সেগুলো সবই ঢেউটিনের ছিল; এগুলো আমাদের প্রত্যেক ফ্রেমে টাইলস দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হতো। খরচের কথাটা একবার ভাবুন! এই ছবিতে ডিটেইলস এর উপর সত্যিকার অর্থেই অনেক কাজ করা হয়েছে।
শিশুদের সাথে কয়েকটা একেবারে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দেওয়ার মতো দৃশ্য দেখা গেছে। বিশেষত শিশুদের জন্যে ডায়লগ লেখা কী আপনার কাছে চ্যালেঞ্জিং মনে হয়?
হ্যানেকে: না, আমি এটাকে আর যেকোনো কিছুর চেয়ে কঠিন বলে মনে করি না। আমি বরং এটাকে আরও ফলপ্রসূ মনে করি। শিশুরা অনেকটা ডিসার্মিং, কারণ তাদের মাঝে সোজাসাপ্টা একটা ব্যাপার থাকে। মৃত্যু নিয়ে ঐ ছোট ছেলেটির কথা বলার যে দৃশ্যটা, আমার দৃষ্টিতে এটি একটি অত্যন্ত সুন্দর দৃশ্য। প্রজেক্টটা নিয়ে আমি সত্যিই ভয়ে ছিলাম যে আমরা প্রস্তুতিপর্বেই অনেক টাকা আর সময় ব্যয় করে ফেলছি, যদিও আমি নিশ্চিত ছিলাম যে টেকনিক্যাল দিক থেকে সবকিছু প্রস্তুত থাকবে, আর শুটিং শুরু হওয়ার ঠিক আগে আমি সঠিক শিশুশিল্পী না পাওয়ার কারণে আটকে যাবো। এজন্যেই আমরা অনেক আগে থেকেই শিশু চরিত্রগুলোর জন্য অভিনেতা খোঁজা শুরু করি, যেন হাতে সময় নেই বলে যে কাউকে দিয়ে কাজ না করাতে হয়। এর জন্যে প্রজেক্টটা একটু বেশিই ব্যয়বহুল এবং চাহিদাপূর্ণ ছিল। কিন্তু আমরা একেবারে সঠিক অভিনেতাদেরই পেয়েছিলাম, বিশেষ করে একদম ছোট্টদের চরিত্রগুলোর জন্য। এটাকে আসলে আমি আমাদের সৌভাগ্য হিসেবেই ধরে নিয়েছি, আর খানিকটা ছিল ঘটনাচক্র, যেহেতু আমরা প্রায় হাজার সাতেক বাচ্চার অডিশন নিয়েছিলাম।
শিশুশিল্পী খোঁজাটা আসলে লটারির মতো, হয় আপনি লাখপতি বনে যাবেন, নয়তো আপনি শূন্য হাতে ফেরত আসবেন। যদি প্রতিভাবান শিশুশিল্পী না পান তাহলে আপনার কোনো কিছুই ঠিকঠাক মতো হবে না। আর যদি তারা প্রতিভাবান হয়, তাহলে দেখবেন সবকিছু এতো দারুণভাবে হচ্ছে যা কিনা প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেও তেমন একটা দেখা যায় না। আমার সব গল্পই যেহেতু পরিবারকেন্দ্রিক, তাই শিশুদের এড়িয়ে আমার পক্ষে কাজ করা সম্ভবও না। যদিও প্রতিবারই শিশুশিল্পী খোঁজার সময় বেশ নার্ভাস থাকি।
‘দ্য হোয়াইট রিবন’ একটি আন্তর্জাতিক ফেস্টিভালের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার জিতে নিয়েছে। এটা ভেবে আপনার কেমন অনুভব হয়?
হ্যানেকে: আমি আর কী বলবো? অবশ্যই আমি খুব খুশি ছিলাম। স্বর্ণপাম ছাড়া কানে জেতার মতো আর সবকিছুই আমি ইতিমধ্যে পেয়ে গেছিলাম। তার ওপর, ওখানে প্রতিযোগিতা করতে যাওয়াটাও কিন্তু মন্দ না, যেখানে প্রায় পনেরোশ ছবি থেকে স্রেফ বাছাই করা বিশটা দেখানো হয়। সেখানকার জন্য নির্বাচিত হওয়াটাই একটা ভালো ব্যাপার, আর কোনো পুরস্কার জেতাটা তো আরও ভালো। কিন্তু যখনই আপনি একবার একটা কিছু জিতে ফেলবেন, আপনি অবশ্যই আরও চাইবেন। যখন ইসাবেল হুপার্ট, ‘গ্র্যান্ড প্রিক্স দ্যু জুরি ফর আন প্রফেতে’ ঘোষণা করছিলেন, আমি তখনই জানতাম আর মাত্র একটা সম্মাননা বাকি। এটা যদিও একইসাথে খুব চাপের এবং সুখকর ছিল।

অনুমান করছি এটা ভবিষ্যতের কাজকে আরও সহজ করবে।
হ্যানেকে: আমার আসলে অভিযোগ করার তেমন জায়গা নেই, কেননা প্রায় সবক্ষেত্রেই আমি নিজে যা চেয়েছি সেসবই করতে পেরেছি। ‘দ্য হোয়াইট রিবন’-এর চিত্রনাট্য একটা লম্বা সময় ধরে পড়ে ছিল। বাস্তবতা এটাই যে, একটা ব্যয়বহুল বা ঝুঁকিপূর্ণ কাজের ন্যায্যতা আনার জন্য আপনার অতীত সফলতার নজির থাকা দরকার। তাই আমার মনে হয় পরের প্রজেক্টটা নিয়ে কাজ করা আরেকটুখানি সহজ হবে, কারণ স্বর্ণপামের মতো পুরস্কার আদতেই আপনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়।
এটার ভালো দিক হলো, আপনার পরিচিতি অনেকটা বেড়ে যাওয়া। কিন্তু এখন দেখার বিষয় হলো পরবর্তীতে আমি কী করতে পারি সেটা। এটার একটা নেতিবাচক দিকও আছে। তা হলো, এখন যারা পরিবেশক আছেন, তারা আমাকে পৃথিবীর সব প্রিমিয়ারেই পাঠাতে চায়। আমি এটাকে সময়ের অপচয় বলে মনে করি, যদিও কোনো একভাবে এটা পুরো প্রক্রিয়াটারই একটা অংশ।
কারণ আপনি ইতিমধ্যেই নতুন কাজ শুরু করে দিয়েছেন?
হ্যানেকে: এর জন্যে আমাকে কিছুদিন সব বাদ দিয়ে লেখাটা দাঁড় করাতে হবে, আমার ডেস্ক কিন্তু ইতিমধ্যেই নতুন প্রজেক্টের নোটস দিয়ে ভর্তি।
ইন্টারভিউ: কারিন সাইফার
জুন, ২০০৯