Skip to content Skip to footer

‘স্বপ্নের কয়েদখানায় খাটতে হবে যাবজ্জীবন’ – কামার আহমাদ সাইমন

সাক্ষাৎকার গ্রহীতা: আসিফ করিম চৌধুরী

তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন পড়াশোনা করেছেন স্থাপত্যকলায়। বুয়েটে পড়াশোনার সময় থেকে সিনেমার প্রতি গভীর অনুরাগ তাকে ধাবিত করেছে চলচ্চিত্র নির্মাণের দিকে। একসাথে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে কিংবদন্তি নির্মাতা তারেক মাসুদের সাথে। আনুষ্ঠানিক নিমন্ত্রণে ঘুরে বেড়িয়েছেন কান-বার্লিন-লোকার্নোর মতো প্রথম সারির উৎসবগুলোয়। ফিকশন-ননফিকশন ঘরানার জলত্রয়ীর প্রথম ছবি শুনতে কি পাও! (২০১৪) দিয়ে প্রথম আলোচনায় আসেন। ছবিটির অভিষেক হয়েছিল বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন প্রামাণ্যচিত্র উৎসব জার্মানির ডক লাইপজিগের উদ্বোধনী রাতে। জয় করেছে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ এছাড়াও মুম্বাইয়ে ‘স্বর্ণশঙ্খ’, প্যারিসে ‘গ্রাঁপি’। আমাদের সময়ের তির্যক জিজ্ঞাসা নিয়ে এরপর তিনি হাজির করেন মনোলগ কোলাজ একটি সূতার জবানবন্দী (২০১৫)। পাশাপাশি শুরু করেন জলত্রয়ীর দ্বিতীয় ছবি অন্যদিন এর শ্যুটিং, সেই সাথে শিকলবাহা।  কিন্তু নীল মুকুট নামে আরেকটি অপরিকল্পিত ছবি আগে আলোর মুখ দেখবে বলে আশা রাখছেন পরিচালক।

আপনি তো শহরে বড় হয়েছেন। শহরে আপনার জন্ম, পড়ালেখা। কিন্তু কাজ করলেন একেবারে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিয়ে। কখনও সুন্দরবনের সুতারখালি গ্রাম, কখনও গার্মেন্টসকর্মী। এটা কেন? 

কামার আহমাদ সাইমন: কিন্তু তার আগে আপনার আগের বক্তব্য ধরে একটা পাল্টা প্রশ্ন করতে চাই। আপনি যদি শুনতে কি পাও! দেখে থাকেন, দেখার পর কী মনে হয়েছে? এটা ডকুমেন্টারি নাকি ফিকশন? সত্যি বলতে আমি যখন ছবিটা বানাই, ভাষার দিক থেকে আমার একটা চেষ্টা ছিল কোনো নির্দিষ্ট ঘরানা বা ব্যাকরণ অনুসরণ না করে যেটা আমি বানাতে চাইছি সেটাই বানাবো। এর জন্য প্র‍য়োজন হলে চরিত্র বসাবো, চরিত্র বদলাবো, দরকার হলে রিশ্যুট করবো। টেকনিক্যাল দিক থেকে আমি এটাকে বলি ফিকশন-ননফিকশন। এটা আমাদের এখানে পরিচিত ধারা না হলেও বিশ্বব্যাপী নতুন সিনেমার ভাষা হিসেবে কদর পাচ্ছে।  

এটা ঠিক যে শহরে বেড়ে ওঠার ফলে আমার নিজের কিছু নাগরিক সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু জীবন এভাবে যাপন করতে হবে বা যার নাম যাপিতজীবন—জীবনের এই সরলীকরণ নিয়ে আমি কখনোই খুশি ছিলাম না। নাগরিক জীবনের বাইরে গিয়ে যে জীবন, বৃত্তের বাইরে যে বিস্তৃত পরিধি, তার প্রতি আমার সব সময় এক ধরনের ক্ষুধা ছিলো। সেই বিস্তৃতির খোঁজে, ক্ষুধার জায়গা থেকে, খোঁজার চেষ্টা থেকেই গিয়েছিলাম সুতারখালি গ্রামে, সেখান থেকেই তৈরি হয়েছিলো শুনতে কি পাও! আসলে সিনেমা বানাতে গেলে কষ্ট করতে হবে। এর কোনো সহজ রাস্তা নাই। এই অস্থির সময়ে সিনেমা বানাতে গেলে ক্রীতদাসের জীবনযাপন করতে হবে, নিজের কমফোর্ট জোনের বাইরে আসতে হবে, স্বপ্নের কয়েদখানায় খাটতে হবে যাবজ্জীবন। এটাই স্বাভাবিক।  

আরেকটা কথা হল চিন্তাভাবনার দিক থেকে আমি অবশ্যই কারো না কারো উত্তরাধিকার এবং সেই উত্তরাধিকারের ধারাবাহিকতা। সেখানে সাহিত্য আছে, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র আছে। এস এম সুলতানের চিত্রকর্ম দেখলে তা জীবন সম্পর্কে, মানুষ সম্পর্কে যে প্রণোদনা বা বিস্তৃতি দিবে, সেটিকে খাদ্য হিসেবে নিতে পারলে তা মগজে পুষ্টি যোগাবে। আপনি যদি সাহিত্যের দিকে তাকান, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মানদীর মাঝি’ বা তারাশংকরের ‘কবি’র কথা যদি বলি তাহলে দেখবেন মানিকের মতো কলকাতার একজন উচ্চ শিক্ষিত নাগরিকের পক্ষে ‘পদ্মানদীর মাঝি’ বা ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ লেখা সম্ভব হয়েছে। কারণ, তারা সবাই জীবনের বিস্তৃতির খোঁজে ছিলেন। তাদের সাথে হয়তো জেলেপাড়ায় বেড়ে ওঠা অদ্বৈত মল্লবর্মণের দৃষ্টিভঙ্গি মিলবে না। সুতরাং, তাঁর মতো করে মানিকের দেখা সম্ভব হবে না। মানিকেরও একটা আলাদা দৃষ্টিকোণ আছে যা আমরা ধার করতে পারি। সেভাবে আমি এই ব্যাপারকে এককভাবে আমার নিজের কোনো কৃতিত্ব হিসেবে দাবি করতে পারি না।

একইভাবে অদ্বৈত মল্লবর্মণের মত জেলেপাড়ায় বেড়ে ওঠা কোনো নির্মাতা যদি শুনতে কি পাও! বানাতেন তাহলে আপনার চেয়ে ভিন্নরকম হবে। সেক্ষেত্রে আপনি আপনার ছবিতে প্রান্তিক জীবন কতটুকু ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন বলে মনে হয়?  

কামার: কতটুকু ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি কিনা তা ভাবা নির্মাতার জন্য ক্ষতিকর। যদিও আমাদের ঔপনিবেশিক মন পুরস্কার বা স্বীকৃতির মাপকাঠিতে উতরে যাওয়ার জন্য কাঙ্গাল। কিন্তু একটা সৃষ্টিকে মাপার স্কেল কী হবে? আমার বানানো ছবি আমার মতো করে দেখা আমার ছবি। যেকারণে অদ্বৈত মল্লবর্মণ আর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদাহরণটা দিলাম। দু’টো উপন্যাস তাদের জায়গায় আছে কিন্তু কোনোটাই ছোট বা বড় হচ্ছে না। ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ এবং ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ এর মধ্যকার তফাৎ শুধু দুজনের দেখার জায়গায়। সেটাতো বরং আরও সুন্দর, আরাধ্য। তাই আমার কাছে মনে হয় না যে আমি কতটুকু ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি বা কতটুকু ফুটিয়ে তোলা আমার নৈতিক দায়িত্ব ছিল, এটা কোনো দরকারি আলোচনা। 

বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রির বাইরে গিয়ে স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে, এই অবস্থাটা আপনি কীভাবে দেখেন? 

কামার: ইন্ডাস্ট্রির বাইরে বানালেই স্বাধীন, এই ধারণাটা কিন্তু পুরোপুরি ঠিক না। ইন্ডাস্ট্রির বাইরে আরও অনেক বড় ইন্ডাস্ট্রিকে সার্ভ করার লক্ষ্য নিয়ে বানানো হচ্ছে সব ফরমায়েশি ছবি, যেগুলো কোনো অর্থেই স্বাধীন চলচ্চিত্র না। কিন্তু বাজারি সিন্ডিকেটে তারা একটা ‘স্বাধীন…….. স্বাধীন’ তকমা নেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে হ্যাঁ, এটা ঠিক আমরা এক রোমাঞ্চকর সময় পার করছি। চারপাশে সবকিছুর মধ্যে একটা প্রচন্ড চাপ তৈরি হয়েছে। সেই চাপটা শিল্প-সাহিত্যের গায়েও লাগছে। আমি সেই চাপটাকে শুধুমাত্র সামাজিক উন্নয়ন বা অর্থনীতিতে দেখছি না। আমি দেখছি তারুণ্যের চাপ, নতুনের চাপ। এই চাপটা আপনি দেখবেন বাংলাদেশের বৃহদাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে আছে যাদের বয়স চল্লিশের নিচে। এদের মধ্যে তাড়া এবং তাড়না দু’টাই কাজ করছে, বদলানোর। চলচ্চিত্র এই ডামাডোলের বাইরে না। 

আর ইন্ডাস্ট্রির বাইরে গিয়ে চলচ্চিত্র বা প্যারালাল ন্যারেটিভ তৈরি করার যে চেষ্টা সেটি একসময় মূলধারার হয়ে যেতেও পারে। এটা অবশ্য নির্ভর করবে আমাদের সময়টা আমরা কীভাবে কাজে লাগাচ্ছি, নিজেদের চেনার কাজে ব্যবহার করছি। পৃথিবীর যেকোনো উত্তর-ঔপনিবেশিক সমাজই একটা সময় পার করে যখন তারা একধরনের হীনম্মন্যতায় ভোগে, নিজের প্রতি সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাস থাকেনা। যেকোনো কিছুতেই প্রথম হওয়ার একটা চেষ্টা থাকে। এই প্রথম বা একমাত্র হওয়ার প্রতি আকুল আগ্রহ আমাদের পেছনে ফেলে দিতে পারে। এই সংকট কাটিয়ে যদি আমরা নিজেদের গল্প নিজেদের ভাষায় বলা শুরু করি তাহলে অবশ্যই আমরা সিনেমা এবং সিনেমাকে ঘিরে অন্যান্য যে অনুষঙ্গ আছে প্রত্যেকটাতেই নতুন কিছু পাবো। 

আপনি কি আমাদের ইউরোপমুখিতার কথা বলছেন? 

কামার: শুধু ইউরোপ না, আমি ইরান-মুখিতা, লাতিন-মুখিতা এবং হালের কোরিয়া-মুখিতাসহ সব রকম মুখিতার কথা বলছি। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ইউরোপিয়ানদের রচিত ইতিহাসে ইউরোপিয়ানরাই অগ্রসর জাতি হবে। তার ওপর চলচ্চিত্রের সৃষ্টি থেকে শুরু করে উন্নয়ন পুরোটাই যেহেতু হয়েছে পশ্চিমে। কিন্তু সিনেমার ভাষাগত দিক থেকে আমাদের একটা অনুকরণের প্রবণতা আছে, সেখান থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। যেটা ইরানিয়ান, লাতিন বা হালের কোরিয়ান সিনেমায় দেখা গেছে। কিন্তু এখন যদি আমরা আবার ইরানিয়ান বা কোরিয়ান ছবিকে নকল করতে যাই সেটাও হবে মারাত্মক ভুল। আমাদের নিজেদের ন্যারেটিভ তখনই তৈরি হবে যখন আমরা দুনিয়া থেকে শিক্ষা নিবো, কিন্তু কথা বলবো নিজের ভাষায়। 

(এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের ম্যাগাজিন ‘ফ্ল্যাশব্যাক’ এর পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে…) আমি দেখছিলাম এখানে একটা সাক্ষাৎকার আছে যার শুরুটা হচ্ছে—‘১৮৮৯ সালে জানুয়ারি মাসে কোনো এক ভোরে হয়তো পিয়াসদার কার্লো ও আলবার্তোর ছয় নম্বর দরজা দিয়ে বের হয়েছিল নিৎশে’। বেলা তারের তুরিন হর্স ছবিটা নিয়ে লেখা। এখন ১৮৮৯ সালে জানুয়ারি মাসে কোনো এক দুপুরে হয়ত ঢাকার ওয়ারির ২৩ নং লেনে আরেকজন মনীষীও বের হয়েছিল। সেটার খবর কি আমরা জানি? 

নিৎশের দর্শন নিয়ে এই যে আমরা কিছুটা হলেও জানি, কিন্তু আমাদের বৌদ্ধ ভিক্ষু শান্তিরঞ্জনের দর্শনের খবর কি আমরা রাখি? আজকের বিক্রমপুরের ‘পন্ডিতের ভিটা’ নামের গ্রামটা যে প্রাচ্যের অন্যতম মনীষী অতিশ দীপঙ্করের সেই খবরটা কি আমাদের প্রজন্মের বাহাসে আছে? আমার প্রশ্নটা সেইখানে। বিশ্বায়নের ফলে আমাদের মনে হয় আমরা সব কিছুতে পৌঁছাতে পারছি। কিন্তু আসলে ঘটছে উল্টোটা। আমরা শুধু বিশ্বায়নের মোড়লদের তৈরি করা ন্যরাটিভের খবরাখবরই রাখছি বা ইংরেজিতে যা পাওয়া যায় সেটাই পাচ্ছি। বেলা তার সম্পর্কেতো আজকাল আমরা অনেক কিছুই জানি। কিন্তু মালায়লাম সিনেমার নিউ ওয়েভের পুরোধা নির্মাতা আদুর গোপালকৃষ্ণানকে আমরা কতটুকু চিনি? সিনেমার জন্য তিনি কতটা পাগলামি করেছেন বা চেনা ভাষার বাইরে গিয়ে নতুন ছবি করেছেন তা কি আমরা জানি? এটাই উত্তর-ঔপনিবেশিক সমাজের বিপদ। আমাদের শুধু নিৎশে-গ্রামসির নাম কপচালেই হবে না, নিজেদের দিকেও তাকাতে হবে। নিজেদের চিনতে না পারলে, নিজেদের সম্মান করতে না শিখলে আমরা কোনদিনই ভোক্তা থেকে উৎপাদকে পরিণত হতে পারবো না। এখানে আমাদের উত্তর-ঔপনিবেশিক অতিমুগ্ধতা কাজ করছে, এই অতিমুগ্ধতা থেকে আমরা বের হতে পারিনি। আমরা এখনো বম্বের লেবেল লাগাতে পারলে জাতে উঠি, কলকাতায় যেটা হয় সেটাকে প্রথম ভাবি, ঢাকাকে দ্বিতীয়। এটাই উত্তর-ঔপনিবেশিক সংকট।

আপনার কি মনে হয় বর্তমানে বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের ভাষা তৈরি হয়েছে?  

কামার: আমার মনে হয় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সময়ের সাথে যুতসই একটা ভাষা ছিল, যেটা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। সত্তর বা ষাটের দশকের চলচ্চিত্রগুলোর গল্প বলার নিজস্ব একটা ঢং ছিল। তার দর্শকশ্রেণিও ছিল। প্রশ্নটা কিন্তু সিনেমার ভাষা ভালো-খারাপের নয়, ভাষার অস্তিত্বের। ষাট-সত্তরের দশকে তৈরি হওয়া সিনেমার ভাষার বিকৃত রূপ আমরা দেখেছি আশির দশকে। পাশাপাশি একই সময়ে (আশির দশকে) শর্টফিল্ম ফোরাম আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে নব্বই দশকে তারেক মাসুদ, তানভীর মোকাম্মেল, মোরশেদুল ইসলাম ছবি বানাচ্ছিলেন। তাঁদের একটা চেষ্টা ছিল ভাষার দিক থেকে। এর পরে টেলিভিশনের প্রচন্ড প্রতাপে সেই ভাষার পথচলা কিছুটা থমকে গিয়েছিল। সম্ভাব্য নতুন নির্মাতারা কমবেশি সবাই টিভিসি বা নাটক নির্মাণের দিকে চলে যাচ্ছিলেন। ফলে ২০০০ সালের পরে ভাষা আর পরিষ্কারভাবে দাগ কাটতে পারে নি। তবে বিশেষ করে, তারেক মাসুদ পরবর্তী সময়ে আমরা যারা ছবি বানানোর চেষ্টা করছি তাদের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে নিজেদের ভাষা বোঝার একটা চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। সেটা অবশ্য এখনো কোথাও পৌঁছাতে পারেনি। হালের স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে একটা ভাষা তৈরি হচ্ছে, কিন্তু সেটাও ফরমায়েশি বিজ্ঞাপনের এক্সটেনশন। কিন্তু আমি সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি, সেজন্যই বললাম চাপের যে ব্যাপারটা।

কাদের জন্য আপনি সিনেমা বানান? আপনার দর্শক কারা? 

কামার: আমি আপনার জন্য ছবি বানাই। আপনার মতো যে মানুষটা দরজা ধাক্কা দিয়ে আমার ঘরে ঢুকে যায় আমি সেই ক্ষুধার্ত মানুষটার জন্য ছবি বানাই। যাকে ঠেলে দূরে রাখতে পারিনা, সে দর্শকের জন্যই ছবি বানাই আমি। আর সেই দর্শকের জন্য আমিও ভীষণ আকুল। এটা অনেকটা প্রেমের মতো। আমি সেই দর্শকের জন্য ছবি বানাই না, যে কালকে ছবি দেখে পরশুদিন ভুলে যাবে। আমি দর্শকদের কম্ফোর্ট জোনের বাইরে নিয়ে যেতে চাই, যে কিনা ছবি দেখার পর রাতে গিয়ে ঘুমানোর আগে চিন্তা করবে। তাই আমার ছবিতে কোনো ‘ব্যাংকেবল আর্টিস্ট’—মানে যাকে ছবিতে নিলে নিশ্চিত আমার ব্যাংক একাউন্ট বড় হবে—এইরকম কোনো আর্টিস্ট থাকেন না। ছবিতে কতটাকা খরচ হয়েছে, বা কয়টা হলে আমার ছবি মুক্তি পেয়েছে—এসব ভেবে যদি কেউ আমার ছবি দেখতে যান, তাহলে নিরাশ হতে পারেন। যাঁরা ছবি দেখতে গিয়ে প্রচলিত অর্থে নায়ক-নায়িকার প্রেম খোঁজেন, আমি তাদের নির্মাতা না। কিন্তু যাঁরা মানবপ্রেম-প্রকৃতি-রস আস্বাদন করতে চান, যাঁরা ‘সহজ মানুষ’ এর খোঁজে থাকেন, তাদের জন্য ছবি বানাতে আমার ভালো লাগে। ইউটিউব, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বা কোনো মঞ্চের বয়ানে না, আমি আমার দর্শক খুঁজি লোকারণ্যে, যাদের আমি দেখতে পাই, ছুঁতে পাই… ছবি দেখে যারা সামনা-সামনি এসে আমার সাথে কথা বলেন… তারাই আমার দর্শক।

নায়ক-নায়িকা বাণিজ্যিক ছবির ফসল। আপনি কি বাণিজ্যিক ছবির বিরুদ্ধে? 

কামার: আমি কোনোভাবেই বাণিজ্যিক ছবির বিরোধী নই। এর কারণটা হলো বাণিজ্যিক ছবির বেহালের জন্য সবচেয়ে বেশি যদি কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে, তাহলে সেটা হলো আর্ট হাউস সিনেমা। শর্ট ফিল্ম ফোরাম আন্দোলনের কারণে আমরা অনেক গুণী নির্মাতা পেয়েছি সেটা সত্য কথা কিন্তু একইসাথে আমরা অনেক কিছু হারিয়েছি। সবচেয়ে বড় যে জিনিসটা হারিয়েছি সেটা হল এফডিসিতে আমাদের অধিকার। পুরো ইন্ডাস্ট্রির কেন্দ্রবিন্দু বা মক্কা ছিলো যে এফডিসি, সেই মক্কাটা হাতছাড়া হওয়ায় আমাদের অনেক সম্ভাবনার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। বাণিজ্যিক ছবির বিরোধিতা একমাত্র বোকারাই করে। দেখুন একটা বাণিজ্যিক প্রকাশনা সংস্থা যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে ইলিয়াস বা শওকত আলীর বই ছাপাও বন্ধ হয়ে যাবে। এটা বোঝা জরুরী।

কিন্তু বাণিজ্যিক সিনেমা কি ভুল ধারণা ছড়ায় না? ধরুন নায়িকাকে ইভটিজিংয়ের ব্যাপার…  

কামার: এটাতো ইন্ডাস্ট্রির একার কন্ট্রিবিউশন না। এটা আপনার সমাজ, সংগঠন এবং রাষ্ট্রের রেগুলেটরি অথরিটির যৌথ ব্যর্থতার ফসল। গত ১০ বছরের ইভটিজিং কিন্তু ৩০ বছর ধরে চলে আসা এই যৌথ ব্যর্থতারই ফসল। কারণ আশির দশক থেকেই ইভটিজিং চরমভাবে ঢাকাই চলচ্চিত্রে প্রচলিত একটা ‘গ্রহণযোগ্য’ ধারণা। এবং সেই ইভটিজিং করা নায়কটাই কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই নায়িকাকে বিয়ে করছে। এখন যে কিশোর এই দেখে বড় হচ্ছে, সে তো রাস্তায় গিয়ে ইভটিজিং করার চেষ্টা করতেই পারে। এর জন্য কি আপনি বাণিজ্যিক ছবি বন্ধ করে দেবেন, না সমস্যার মূলে গিয়ে সমাধান করবেন? মাথা কাটলেই তো সমাধান হবে না।  

আরেকটা ঘটনা হলো শর্ট ফিল্ম ফোরাম আন্দোলন। এটা নিয়ে আমি তারেক মাসুদের সাথেও বিতর্ক করেছি। এই আন্দোলনের ফলে আমরা আগামী, হুলিয়া, চাকা, মুক্তির গান, মাটির ময়না’র মত অসাধারণ কিছু ছবি পেয়েছি সত্যি। কিন্তু এই আন্দোলনের ফলে এফডিসিতে চলচ্চিত্রপিপাসু শিক্ষিত, রুচিশীল জনগোষ্ঠীর ইনক্লুশনের যে পদ্ধতি ছিল সেটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। এর আগ পর্যন্ত ৬৪ জেলার ৬৪ জন তরুণ, সে শিক্ষিত-অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত-কুশিক্ষিত যেই হোক না কেন, ছবি বানাতে চাইলে সবাই প্রথমে এফডিসিতে আসতো। কিন্তু এই আন্দোলনের পর সেটা বিভক্ত হয়ে গেলো। জহির রায়হানের বা আলমগীর কবিরের উত্তরাধিকার আর সে পথে যায় নাই। অতঃপর স্বাভাবিকভাবেই সিনেমার প্রতিটি সেক্টরে অধঃপতন শুরু হলো। সুতরাং এরপর যারা গেলো, এবং তারা যে ছবি বানালো… তার ফলাফল আমাদের সামনে আছে। তাই একতরফাভাবে শুধু বাণিজ্যিক ছবিকে দায়ী করে লাভ নাই, বাকি আমাদের সবার দায়টাও ভেবে দেখা দরকার।

বর্তমানে আপনারা যারা ছবি বানাচ্ছেন তাদের এফডিসিতে ফিরে যাওযার সুযোগ আছে কিনা? 

কামার: আমিতো মনে করি ফিরে যাওয়া উচিত। কিন্তু সেটা শুধু আমি মনে করলেই হবে না, এফডিসিকেও আমার প্রয়োজন উপলব্ধি করতে হবে। কারণ বর্তমানে চলচ্চিত্র এতোটাই বহুমাত্রিক যে এফডিসি তার জন্য নিজেই প্রস্তুত কিনা আমি জানি না। ধরেন এখন আমরা যারা এফডিসির বাইরে ছবি বানাচ্ছি, আমাদের টেকনিক্যাল বা ক্রিয়েটিভ প্রয়োজন এফডিসি কতটুকু সার্ভ করতে পারবে বা যে ছেলেটা ঘরে বসেই মোবাইল ফোন দিয়ে ছবি তৈরি করছে, ইউটিউবে শর্ট ফিল্ম আপলোড দিচ্ছে, তার জন্য এফডিসি কতটা ইনক্লুসিভ হবে সেই সিদ্ধান্ত এফডিসির দায়িত্বে যারা আছেন তাদেরকেই নিতে হবে। 

বর্তমানে সিনেমা আর সিনেমা হলে সীমাবদ্ধ নেই। বিভিন্ন ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম যেমন ধরুন নেটফ্লিক্স এর মাধ্যমে ছবির পরিবেশনা চলছে। এর ফলে সিনেমা হলের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে আসছে কি? 

কামার: আমি মনে করি সিনেমা হলের প্রয়োজনীয়তা সবসময়ই থাকবে। হলে গিয়ে ছবি দেখার অনুভূতি অন্য কোনো মাধ্যমে কখনোই সমান হবে না। বিশাল পর্দার সামনে কালো অন্ধকার ঘরে অনেক মানুষের মধ্যে বসে ছবি দেখার যে সামষ্টিক উদযাপন তাকে খাটো করে দেখেন না। আমি এখনো শুনতে কি পাও! ছবিটা সবসময় বড় পর্দায় দেখানোর চেষ্টা করি কারণ এর প্রতিটা ফ্রেম তৈরির সময় আমার মাথায় ছিলো বড় পর্দা। হলের প্রয়োজনীয়তা না বরং আমি বলবো এর স্পেস বা পরিসর হয়তো কমে আসছে। আমি মনে করি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সিনেমাকে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু একই সাথে এটা মানুষকে একা করে দিচ্ছে, সামষ্টিক অভিজ্ঞতা উদযাপনের জন্য যেটা হুমকি। তাছাড়া নেটফ্লিক্স বা অ্যামাজনের মতো একটা বা দুইটা প্ল্যাটফর্ম সারা পৃথিবীর মানুষের স্ক্রিন দখল করে নেওয়াও একরকম কলোনাইজেশন। এটা ভবিষ্যতে নিজেদের স্থানিকতা ধরে রাখার জন্য হুমকি।

আপনার সিনেমা বিভিন্ন খ্যাতনামা উৎসবে গিয়েছে। দেশের বাইরে আমাদের ছবির অবস্থান কেমন? 

কামার: বিচ্ছিন্নভাবে দু-একটা ছবি হয়তো ভালো কিছু উৎসবে গেছে, কিন্তু সত্যি কথা বলতে বাংলাদেশি সিনেমার তেমন প্রতিনিধিত্ব এখনো নেই। আর ‘বাংলাদেশি সিনেমা’ বললে এক ধরনের বাজারের ব্যাপার চলে আসে যেমন ইন্ডিয়ান সিনেমা, কোরিয়ান সিনেমা, ইরানিয়ান সিনেমা। সে পর্যায়ে বাংলাদেশি সিনেমা এখনো নেই। তার জন্য যে পরিমাণ মানসম্মত চলচ্চিত্র তৈরি হওয়া দরকার তা বাংলাদেশে হচ্ছেনা। 

যদিও চলচ্চিত্র উৎসব একজন নির্মাতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করি আমি। বিশেষ করে উৎসবে যে এক্সক্লুসিভ জায়গাটা দেয়া হয় একজন সৎ নির্মাতা আজীবন সেটাই খোঁজেন। এর পাশাপাশি নতুন কোনো ভাষা বা সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য এটি চমৎকার একটি জায়গা। তবে আমার সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত ছিল সূতারখালি গ্রামে, যখন একটা জলাশয়ের মাঝে হাজারো লোকের সামনে তাঁবু দিয়ে পর্দা বানিয়ে স্ক্রিনিং করেছিলাম শুনতে কি পাও! আরেকটা স্মরণীয় মুহূর্ত হয়েছিল আপনাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় চলচ্চিত্র সংসদের আয়োজনেই টিএসসির স্ক্রিনিংয়ে—যেখানে দাঁড়ানোরও জায়গা ছিলো না, বসা তো দূরে থাক। যখন এই ব্যাপারটা ঘরেই ঘটে তখন আর বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

ঠিক কখন কী কারণে আপনার সিনেমা বানানোর চিন্তা মাথায় আসলো? 

কামার: আমার সিনেমার সাথে প্রথম এনকাউন্টার ঘটেছিল যখন আমি কলেজে পড়ি। তখন পাবলিক লাইব্রেরিতে ‘চাইনিজ ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’ চলছিল। সৌভাগ্যক্রমে হোক অথবা দুর্ভাগ্যক্রমেই, আমি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব ছবি দেখেছিলাম। সারাদিন ছবি দেখতাম। এই ঘটনার পর আমি নিয়মিত ছবি দেখা শুরু করি। 

দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর আর্কিটেকচারে ভর্তি হই। Architecture is frozen music বলে একটা কথা আছে। পরবর্তীতে অনুভব করলাম, Architecture যদি frozen music হয় তাহলে Film is the embodiment of all art. অর্থাৎ শিল্পের এমন কোনো রূপ নেই যা আমি সিনেমায় খেলতে পারছি না।

সবার তো প্রিয় ছবি থাকে। আপনি কোন ছবিগুলো দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন? 

কামার: আমার ছবিতে কার প্রভাব আছে সেটা বলা আমার জন্য অসম্ভব। তবে দু-একটা ছবির কথা বলতে পারি। যেমন একটা ছবি দেখার পর মনে হয়েছে যে পৃথিবীর আল্টিমেট বা চূড়ান্ত ছবিটা বানানো হয়ে গেছে। বলা যায় একজন নির্মাতা হিসেবে আমাকে ব্লো আউট করে দিয়েছে। আল্টিমেট ছবিটা তো আমার বানানোর কথা ছিল, তাই না! (কৌতুক করে) যেকোনো নির্মাতাই তো এভাবে ভাবে! দর্শকরা যদি কোনো একটা ছবি দেখে বলে যে আল্টিমেট কিছু একটা হয়েই গেছে তাহলে আমার তো আর কিছুই করার থাকে না। সেই ছবিটা ছিল কুরোসাওয়ার ড্রিমস। ছবিটা আমাকে খুব ভুগিয়েছে। আর্কিটেকচারে পড়ার পঞ্চম বছরে আমাদের একটা কোর্স ছিল, যেখানে প্রত্যেক ছাত্রকে কিছু একটা প্রেজেন্ট করতে হয় এবং নানা দিক থেকে এর ব্যাখ্যা দিতে হয়। সেখানে পঞ্চাশের মধ্যে ঊনপঞ্চাশ জনই বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস প্রেজেন্ট করেছিল। আর আমি ড্রিমস প্রেজেন্ট করেছিলাম। ড্রিমস ছবিটা কেন দেখা উচিত এবং সেটা নিয়ে কেন স্টাডি করা উচিত, এটার মধ্যে কী আছে, কী নেই—এসব ব্যাপার তুলে ধরেছিলাম। 

আমার একটি সূতার জবানবন্দী-তে কুরোসাওয়ার রশোমন-এর প্রভাব ছিল। দেখলাম দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টালে কীভাবে সত্যও পালটে যায়! এই ছবিটা আমাকে ভীষণ প্রভাবিত করেছিল। 

এছাড়া গডফ্রি রেজ্জিওর কাতসি ট্রিলজি আমার খুব প্রিয়। এই ট্রিলজিটা আমাকে খুব ভাবিয়েছে, যদিও এগুলাকে ছবি বলেই অনেকে স্বীকার করেন না। তিনটা ছবি: কয়ানিসকাতসিপয়াকাতসিনাকোকাতসি। কয়ানাকাতসি-র সিনেমাটোগ্রাফার রনফ্রিক, উনি পরে একটা ছবি বানিয়েছিলেন বারাকা নামে, যেটি অনেক জনপ্রিয়তা পায়। রনফ্রিকের বারাকা এবং পরে সামসারা—দু’টাই গডফ্রি রেজ্জিওর এই ট্রিলজি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বানানো। আমি মনে করি এই ট্রিলজি মানবসভ্যতার অনন্য দলিল। এর পরিচালক গডফ্রি রেজ্জিও আসলে একজন কামেল লোক। তাঁকে নির্মাতাদের নির্মাতা বলা যায়। তাঁর নাম অনেকেই শোনে নাই। যেমন কমলকুমার মজুমদারের নাম কয়জন শুনেছে! কিন্তু কমলকুমারকে লেখকদের লেখক বলা হয়। একটা জিনিস কেন দেখব, কীভাবে দেখব বা যেটা দেখছি সেটা কি গ্রহণ করব নাকি এড়িয়ে যাব বা যে ন্যারেটিভটা আছে সেটাই কি একমাত্র ন্যারেটিভ নাকি এর বাইরেও আরো ন্যারেটিভ আছে—এসব বিষয়ে ছবিগুলো আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছে।  

এখন অনেকেই ছবি বানাতে চায়। আমার সাথে মাঝেমাঝে অনেকেই তরুণ যোগাযোগ করে, কথা বলে। তাদের আমি যখন প্রশ্ন করি—‘আপনি ছবি কেন বানাতে চান?’ এই প্রশ্নের উত্তর বেশিরভাগ স্পষ্টভাবে দিতে পারে না। তারা ছবি বানাতে চান, ফেস্টিভ্যালে যেতে চান, অ্যাওয়ার্ডও পেতে চান, অনেক কিছুই বলেন। তাদেরকে আমি ছোট করে দেখছি না। ছবি কিন্তু একটি প্রস্তাবনা, একটা বয়ান। আমি যে বয়ান দেওয়া শুরু করব, আমার নিজের বয়ানটা তো আগে ঠিক করতে হবে। আমি যদি আরেকজনের বয়ান শুনে বয়ান দেওয়া শুরু করি, আমার যদি ইউরোপিয়ান ছবি ভালো লাগে বলে ইউরোপিয়ানদের অনুকরণ শুরু করি, তাহলে হয়তো ওটা কিছুদিন টিকতে পারে। কিন্তু আমাকে কোনোভাবে সেটা সার্ভ করবে নাকি সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত না। 

আপনি ছবি কেন বানাতে চান এর উত্তর পাওয়ার জন্য শুধু ছবির কাছে ফেরত গেলে হবে না, আপনার সাহিত্যের কাছে ফেরত যেতে হবে, সংস্কৃতির কাছে ফেরত যেতে হবে, ইতিহাসের কাছে ফেরত যেতে হবে, কৃষ্টির কাছে ফেরত যেতে হবে, তারপর আপনি ছবির আসল মানে খুঁজে পাবেন। ছবি বানানোর জন্য আপনি তৈরি কিনা তা জানার জন্য আপনাকে ফেরত যেতে হবে শেকড়ের কাছে।

( ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ আয়োজিত আমার ভাষার চলচ্চিত্র-১৪২৬ এর স্মরণিকায় প্রকাশিত)

Leave a comment