Skip to content Skip to footer

নীল মুকুট: ন্যারেটিভের নীল নিশানা


নীল মুকুটের ব্ল্যাক স্ক্রিন


প্রশাসনিক বাস্তবতার আড়ালে থাকা নারীর পেশাগত বাস্তবতার সিনেমা নীল মুকুট (২০২১)। সিনেমাটি ডকুমেন্টারি ফর্মে বানানো। পুলিশ বিভাগের নারী সদস্যদের পেশাগত জীবনের নানা কর্মকান্ডের ভগ্নাংশ দিয়ে তৈরি হয়েছে এই সিনেমা।

নীল মুকুট কেন গল্প বলতে চায় না? কী এর উদ্দেশ্য, কী বা বিধেয়? আর রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামোর সাথে নারীর সম্পর্ক-শাস্ত্র কিভাবে রচিত হয়েছে এই সিনেমায়? ন্যারেটিভ পর্যালোচনার মাধ্যমে তা-ই জানার চেষ্টা করবো।


নীল মুকুটের ন্যারেটিভ উপাদান


ন্যারেটিভকে বলা যায় একাধিক ঘটনা দিয়ে সাজানো একটি সিস্টেম। এখানে গল্পের মতো শুরু আছে, মধ্যভাগ আছে কিন্তু গল্পের মতো হুবহু শেষ নেই। অর্থাৎ গল্পের ধারাবাহিকতা ভেঙে, একটা ঘটনার সাথে আরেকটা ঘটনা জোড়া দিয়ে নতুন আরেকটা ধারাবাহিকতা তৈরি করে ন্যারেটিভ। আর এই ধারাবাহিকতা তৈরির মাধ্যমে চোখের দেখা বাস্তবতাকে যেমন হুবহু হাজির করা যায়, তেমনি বাস্তবতাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবেও উপস্থাপন করা যায়। আবার নতুন আরেকটি বাস্তবতাও তৈরি করে ফেলা যায়।


নীল মকুট-এর সম্পূর্ণটা জড়িয়ে আছে বাস্তবতার উদ্দেশ্যপূর্ণ উপস্থাপন। অর্থাৎ বাস্তবে যা ঘটেছে সেগুলোর নির্বাচিত অংশ নির্মাতার নিজস্ব ধারাবাহিকতায় সাজিয়ে এই সিনেমা তৈরি হয়েছে। রিঅ্যাকশন শট এই ধারাবাহিকতাকে একই সরলরেখায় ধরে রেখেছে। ফলে সিনেমা দেখতে দেখতেই আমরা এর অর্থ বুঝে যাই।

ডকুমেন্টারিতে ন্যারেটিভ তৈরির অন্যতম শক্তিশালী কিন্তু দুর্লভ উপাদান হলো রিঅ্যাকশন শট। কারণ রিঅ্যাকশন শটে বাস্তবতার অর্থ অবিকল ধরা থাকে। আমরা সাধারণত রিঅ্যাকশন শটের দুর্বল বিকল্প হিসেবে ধারাভাষ্য, সাক্ষাৎকার, সংগীত ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকি। নীল মুকুটে এগুলোর কোনটি ব্যবহার করেননি নির্মাতা। বরং রিঅ্যাকশন শটের গাঁথুনি দিয়ে তৈরি করেছেন এর বহুস্তর বিশিষ্ট ন্যারেটিভ। এই সিনেমার প্রধান দুই চরিত্র—শাহানা (পুলিশ পরিদর্শক) এবং মোনালিসা (সহকারি পুলিশ পরিদর্শক)। চরিত্রদের সাথে সিনেমাটিক নৈকট্য তৈরির মাধ্যমে নির্মাতা তাদের ক্লোজশটের দুরত্বে বিচরণ করেছেন, আর স্বতঃস্ফূর্ত এবং সাবলীলভাবে তুলে এনেছেন তাদের পুলিশি জীবন; কর্মব্যস্ততা এবং অবসর।

কিন্তু নীল মুকুটে চরিত্রদের অ্যাকশনের চেয়ে রিঅ্যাকশনই বেশি। ঘটনার চেয়ে ঘটনার টুকরো টুকরো অংশই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। ফলে আমরা এই সিনেমায় গল্পের চেয়ে কাব্যের চমক বেশি দেখতে পাই। কাব্য যেমন করে মাধুর্য সৃষ্টি করে যায়; বাস্তবতাকে উপস্থাপন কিংবা গোপন করার কোনো দায় নেয় না। নীল মুকুটও তেমনি গল্পচ্ছলে গল্পকে এড়িয়ে যায়। আর দৃশ্যের সমান্তরালে যেন হাজির হতে থাকে দেশভ্রমণের ন্যারেটিভ।


চল না ঘুরে আসি অজানাতে


জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশন—যেন এক আনন্দ যাত্রা! হাইতি—যেন একটি মনোরম পর্যটনকেন্দ্র! সেখানে যাওয়ার জন্য রাতদিন চলে নারী পুলিশদের প্রস্তুতি। হাইতির UN কর্মকর্তা যেন ভ্রমণগাইড। দেশটির কোথাও কোনো অস্থিরতা নেই। ফলে তারা রাতদিন গাইড নিয়ে ঘুরে বেড়ান। হৈ-হুল্লোড় করেন। দলবেধে শপিংয়ে যান। আর ছবি তুলেন। একদিন অসাবধানতাবশত একজনের ব্যাগের জিনিসপত্র (গ্যাস গান) পানিতে ভিজে যায়। এজন্য অবশ্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়না। তারা যে ক্যাম্পে থাকেন সেখানে কোনো নিয়ম নীতির বালাই নেই। ফলে দলপ্রধানের নিদের্শগুলো অনুরোধের মত শোনায়। আর ডিউটিতে থাকা হাবিবা কিংবা আদুরি কোনো নির্দেশ মানতে চায় না। তাদের দলের জিনিসপত্রও গোছানো থাকে না। একদিন ক্যাম্পে একটি অনুশীলনের আয়োজন করা হয়। নারীরা সেখানে দাঙ্গা-পুলিশ সাজে। আর পুরুষরা হয় বিক্ষুব্ধ জনতা। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া খেলা। জাতিসংঘের অতিথিগণ বসে বসে হাওয়া খান আর এই খেলা দেখেন। খেলাশেষে নারীরা সাপের নাচ দেখায়। এদিকে ভূরিভোজের জন্য আনা হয় ছাগল। একটি ছাগল হঠাৎ দৌড়ে পালিয়ে যেতে চায়। কিন্তু শেষমেষ সেটি পুলিশের হাতেই ধরা পড়ে। তারপর শুরু হয় রান্নাবান্না পর্ব। পুরুষরা মাংস কাটে। নারীদের কেউ ফোনে কথা বলে, কেউবা বসে বসে গান ধরে—’কেন পিরিতি বাড়াইলায়রে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি’। যেন অবসর আর আনন্দের এই নগর ছেড়ে আবার দেশে ফিরে যেতে হবে।

অবসরে

এমন রঙ্গ-রসিকতাময় ন্যারেটিভ তৈরির মাধ্যমে নীল মুকু নারীর পেশাগত যোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। কিন্তু নীল মুকুট নারীর ক্ষমতাকে ঘাটায় না। তখন মাহমুদার আক্ষেপের কথা মনে পড়ে যায়—”এইগুলো সবাই না… সেনাবাহিনীর একটা ট্রেনিং স্কুলই আছে। আর আমাদের (পুলিশ) ধরে এনে বসায় দিল। বললো পার্টি চালাও, কমান্ড দাও, দুই দিনেই…।”

তখন প্রশ্ন জাগে। পুলিশ বিভাগ কি তাহলে এর পেশাদারিত্ব হারাচ্ছে? সদস্য নির্বাচন, প্রশিক্ষণ, যাচাই-বাছাই কিংবা জাতিসংঘের শান্তিমিশনে প্রতিনিধি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় মান বজায় রাখতে পারছে না? নাকি প্রতিষ্ঠানটি কেবল নারীর বেলাতেই নমনীয়!

নির্মাতা যেন নারীদের ব্যাপারে একটু নমনীয়ই থেকে যান। নীল মুকুট-এ নারীরা হাইতি গিয়ে তাই নিরাপদে, অবসরে এবং আনন্দেই দিন কাটাতে থাকে।


ঘটনার সমীকরণ কিংবা অবসরের গান


নীল মুকুট-এর টাইমলাইন ধরে এবার ঘটনাগুলো সাজানো যাক। হাইতির পথে পথে কর্তব্যরত নারী পুলিশ গাড়িতে বসে গল্প করেছেন ৭ মিনিট। গাড়ি থেকে তারা মোট ৫ বার নেমেছেন। একবার সাহানাকে একটি স্থানীয় পুলিশ স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে দলের সদস্যদের ছবি তুলতে দেখা যায়। আরেকবার একজন UN কর্মকর্তা কোথাও যাওয়ার পথে সবাইকে চুনাপাথরের পাহাড় দেখান।। আর একবার শাহানাকে রাতের রাস্তায় ১৬ সেকেন্ডের জন্য একঝলক দেখা যায়। এরমধ্যে তারা দুটি প্রতিষ্ঠানেও যান এবং দ্রুতই বের হয়ে আসেন। এই প্রতিষ্ঠান দুটি ঘুরে বেড়ানোর ঘটনা দেখানো হয় মাত্র দেড় মিনিট। ফলে ঠিক বোঝা যায় না তারা কোথায় গিয়েছেন, কী করেছেন। অথচ ৩ মিনিট ধরে নারীদের শুধু শপিং করতেই দেখা গিয়েছে। এই কয়টা ঘটনা বাদ দিলে বাকিসব কর্মকাণ্ড ক্যাম্পেই ঘটতে থাকে। কলেরার টিকা খাওয়া নিয়ে সাহানা ৩ মিনিট ধরে নাটক করে। ৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে সংসার নিয়ে শাহানা-মোনালিসার আলাপ চলে।

ফলে দেখা যায়, নারী পুলিশদের দায়িত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো একরকম এড়িয়েই যাওয়া হয়েছে। আর ঘটনার চেয়েও বেশি গুরুত্ব, বেশি সময় এবং ডিটেইল নিয়ে হাজির করা হয়েছে তাদের অবসর।


কর্মব্যস্ততার মধ্যেও একধরনের ব্যক্তিগত স্পেস তৈরি হয় যেখানে মানুষ হাই তোলে, হাসে কিংবা নিজেকে একটু চাঙা করে নেয়। কর্তব্যরত নারীর এমন অবসরকেই যেন নির্মাতা তার ন্যারেটিভের নিশানা করেছেন। কিন্তু নারীর অবসরের ব্যক্তিগত চিহ্নগুলো ধরেননি। ফলে তার অবসাদ, প্রবাস নিঃসঙ্গতা, প্রতীক্ষা, বাসনা কিংবা মনোদৈহিক বাস্তবতা ফ্রেমের বাইরে থেকে যায়। তাই নারীর কাজের ভীড়ে, অবসরের ফাঁক-ফোকরে ঢুকে পড়ে পুরুষের মৌন চাহনি। আর ধরা পড়তে থাকে নারীর সামাজিক চিহ্ন-চেহারা।


নারীর স্টেরিওটাইপ ইমেজ কিংবা ন্যারেটিভের নিশানা


নীল মুকুট-এর আশ্চর্য দৃশ্যসম্ভার তৈরি হয়েছে নারীর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে। শুধুমাত্র নারীর খুনসুটির দিকে নজর দিলে দেখা যায়, পুং-নজর মোকাবেলা করার জন্য তাকে কর্মক্ষেত্রে কত কৌশলি হতে হয়। কিন্তু এই পুং-নজর নীল মুকুট-এও পড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে নারী-স্বভাবের পুরুষতান্ত্রিক প্রতিকৃতি আঁকতে নির্মাতাও আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সেলিনাকে তখন ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে রূপচর্চাবিষয়ক নির্মাতার জিজ্ঞাসা বা আগ্রহ প্রসঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। এই রূপচর্চার ফাঁদে যেন পড়ে যায় তারা। একজন নারীকে তখন অবসরে ফোনে কথা বলতে বলতে নেইল পলিশ দিতে দেখা যায়। শাহানা তখন সিরিঞ্জ দেখলে ভয় পায় আর ওষুধ খেতে গিয়ে তার মাথা ঘোরায়।আরেকজন ফায়ারিং এর স্কোর ভাল পাওয়ার দোয়া-দুরুদ পড়ে। পুরুষ কর্মকর্তাদের সাথে হাত মেলানো নিয়ে নারীরা রসিকতা করে। কেউ শুদ্ধ ইংরেজি বললেও তারা হাসে, আবার ভাঙা ইংরেজি বললেও হাসে। ইউনিফর্ম পরা নারী তখন আর পুলিশ থাকে না, হয়ে ওঠে যেন আমাদেরই প্রতিবেশী কিংবা চেনা মুখ।

ওষুধ খেতে রীতিমত অস্বস্তিতে শাহানা

অথচ খেয়াল করলে বোঝা যায়, এই নারী পুলিশদের বেশিরভাগই প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা। উচ্চশিক্ষার সুযোগ কিংবা সামর্থ বেশিরভাগ নারীরই নেই। তারা হয়তো ছেলেদের হাত ধরে খেলতে খেলতে বেড়ে ওঠেনি। দুই একজন ছাড়া তাদের কেউ নেইল পলিশ দেয় না, নাকফুল পরে না, গলায় চেইন পরে না, শুদ্ধ বাংলায় কথাও বলে না। তাদের পরনের পোশাকও খুব সাদামাটা। একটা জ্যাকেট কেনার জন্য তাদের অনেকবার দাম করতে হয়। কিন্তু নীল মুকুট-এর ন্যারেটিভে এই বাস্তবতা ধরা পড়ে না।

মিশনে যাওয়ার জন্য নারীর অস্ত্রের প্রশিক্ষণ-প্রস্তুতিও এই পুং দৃষ্টিতে হয়ে ওঠে ছেলেখেলা। ঠিক যেভাবে নারীর উচ্চশিক্ষা তার বাস্তব জীবনে প্রয়োগ ঘটে না। সংসারে হারিয়ে যায়। নীল মুকুট-এ তেমনি প্রশিক্ষণ পর্ব শেষে নারীকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, গ্যাস মাস্ক কিংবা শান্তিরক্ষীদের ব্লু হেলমেট পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জিং কাজে অংশ নিতে দেখা যায় না। কিন্তু আমরা জানি, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের নারীরা ২০১০ সাল থেকে অংশ নিচ্ছে। শুধু নারী সদস্যদের নিয়েই সম্পূর্ণ আলাদা ইউনিট পরিচালনা করে জাতিসংঘে নারীর সাহসিকতার নজির তৈরি করেছে বাংলাদেশ।

শাহানা যখন মোনালিসাকে পরামর্শ দেন—”তুমি যাই করোনা কেন… যা কিছু কর… তুমি কিন্তু তোমার সংসারের জন্যই করছো! তাই না?”, তখন নীল মুকুট-এর ন্যারেটিভে একটা লম্বা দাগ পড়ে যায়। এই দাগের একপাশে নারীর শিক্ষা, দক্ষতা, পেশাদারিত্ব, নেতৃত্ব, দায়িত্ব, স্বপ্ন, সমাজ… আরেক পাশে পাক খায় নারীর স্বামী-সন্তান-সংসার। একপাশে সাহানার সন্তান নিয়ে উদ্বেগ। অন্যপাশে হয়তো দাঁড়িয়ে আছেন সেই নারী পুলিশ কর্মকর্তা; যিনি বলিষ্ঠভাবে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে সাবলীল ইংরেজীতে UN কর্মকর্তার সাথে শাহানাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। ভিজ্যুয়াল স্পেসে তার জায়গা হলেও ন্যারেটিভ স্পেস থেকে তিনি বাদ পড়ে যান। যে নারী পুলিশ হাইতি যাওয়ার আগে টানা ইংরেজিতে বলেছিল, ‘I want to be a good police officer in future’—নারীর স্টেরিওটাইপের বাইরে থাকায় তার গল্পও জানা যায় না।


নীল মুকুট কিংবা ব্লু হেলমেট


নারীরা কি তাহলে এমনই হয়! দর্শকের এই দ্বিধায় নির্মাতা খুশি হন কি না জানা যায় না। কিন্তু একজন ভালো পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার জন্য যে প্রশিক্ষণ, পেশাদারিত্ব এবং নেতৃত্বের উন্নয়ন প্রয়োজন সেটা কি ভবিষ্যতের নারীরা পাবে? কিংবা সংসারের নীল মুকুট ফেলে যে নারী ব্লু হেলমেট মাথায় পরে সাহসিকতার সাথে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চায়, নারীর অগ্রযাত্রাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়—নীল মুকুট তার কাছে কী বার্তা পৌছাবে?

নারীকে এখনো তার যোগ্যতার পরীক্ষা দিতে হয় পুরুষের কাছে, প্রশিক্ষণ নিতে হয় পুরুষের কাছে, তার ক্ষমতা ব্যবহারের জন্য অনুমতি নিতে হয় পুরুষের কাছে, প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হতে হয় পুরুষের কাছে, আবার বিচার চাইতে হয় পুরুষের কাছে—সেখানে পুরুষ দৃষ্টির এই ন্যারেটিভ নারীর স্বপ্নকে কতটা সম্মান জানাবে?

1 Comment

  • mehedi hasan
    Posted October 1, 2021 at 3:12 PM

    ♥️♥️♥️

Leave a comment