ছবি, সাহিত্য, তথ্যচিত্র, সংগীত—সব জায়গায়ই রয়েছে সত্যজিৎ রায়ের বিচরণ। এমনকি ক্যারিয়ারের একটা সময় সায়েন্স ফিকশন সিনেমা বানানোর কথাও ভেবেছিলেন এই নির্মাতা। নাম ঠিক করেছিলেন ‘অবতার’। চিত্রনাট্য এবং চরিত্র বাছাইয়ের মতো কাজ অনেকটা এগিয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত কাজটি করা আর হয়ে উঠেনা তার। এই ছবি প্রসঙ্গেই কলকাতার ‘আশ্চর্য!’ পত্রিকার সম্পাদক অদ্রীশ বর্ধনকে আড্ডাচ্ছলে এই দুইটি সাক্ষাৎকার দেন। দুটো সাক্ষাৎকারই ‘আশ্চর্য!’ পত্রিকায় প্রকাশ পায় ১৯৬৭ সালে, মে এবং সেপ্টেম্বর মাসে। পরবর্তীতে অদ্রীশ বর্ধনের পুত্র অম্বর বর্ধনের অনুমতি নিয়ে সাক্ষাৎকার দুটি পুনর্মুদ্রণ করা হয় ‘কল্পবিশ্ব’ পত্রিকায়। সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন উপলক্ষে তাদের সৌজন্যে এই দুর্লভ সাক্ষাৎকার দুটি প্রকাশ করা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের ব্লগে।
প্রথম সাক্ষাৎকার
প্রেক্ষাপট: সিনেমার কাজে লন্ডন গিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। তার সাই-ফাই ছবির বিশেষ ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য প্রখ্যাত অভিনেতা পিটার সেলার্সকে চুক্তিবদ্ধ করিয়ে ফিরে এসেছিলেন। তখনই ছবির ব্যাপারে কথা হয় অদ্রীশ বর্ধনের সাথে।
অদ্রীশ বর্ধন: পিটার সেলার্সকে চুক্তিবদ্ধ করালেন কোন ভূমিকার জন্যে?
সত্যজিৎ রায়: মাড়োয়ারি ভূমিকার জন্য।
অদ্রীশ: পিটার সেলার্স কোন দেশবাসী?
সত্যজিৎ: ইংলিশ। যুদ্ধের সময়ে পুরো একবছর তিনি কলকাতায় ছিলেন।
অদ্রীশ: কিন্তু তিনি বাংলা বলবেন তো?
সত্যজিৎ: আমার কাহিনিতে তার বাংলা বলার দরকার নেই। আগাগোড়াই তিনি কথা বলবেন এক আমেরিকানের সঙ্গে ইংরেজিতে। কিন্তু তার বাংলা বলার খুব ইচ্ছে। আমাকে খুব ধরেছিলেন। আমি কথা দিয়েছি, ছবিতে বাংলা বলার সুযোগ করে দেব!
অদ্রীশ: পিটার সেলার্স তো ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভ-এ ছিলেন?
সত্যজিৎ: হ্যাঁ।
অদ্রীশ: আমেরিকান চরিত্রে তাহলে মারলন ব্র্যান্ডো থাকছেন?
সত্যজিৎ: ব্র্যান্ডোর থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। কেননা, প্রথমত আমার কাহিনির চরিত্রের সঙ্গে ব্র্যান্ডো তেমন খাপ খায় না। দ্বিতীয়ত, বিলেতে গিয়ে শুনে এলাম ব্র্যান্ডো একটু টেম্পারামেন্টের মানুষ। সোজা কথায় মেজাজি। ওর সঙ্গে কাজ করা মুশকিলের ব্যাপার।
অদ্রীশ: কিন্তু ব্র্যান্ডো তো ইচ্ছুক?
সত্যজিৎ: তা ঠিক। হঠাৎ কলকাতায় উনি এলেন, যোগাযোগটাও হয়ে গেল। তাছাড়া আমার ছবি দেখতে উনি খুবই ভালোবাসতেন এবং প্রতিটি ছবি খুঁজে খুঁজে দেখেন।
অদ্রীশ: কিন্তু ব্যবসায়িক দিক থেকে সাধারণ দর্শকের কাছে ব্রান্ডোর আবেদন বেশি নয় কি?
সত্যজিৎ: বেশি তো বটেই। ব্র্যান্ডো নাম তো আছে। কিন্তু আমি ভাবছি স্টিভ ম্যাকুইনের কথা। স্টিভ এক কথায় অসাধারণ অভিনেতা। বছর চার-পাঁচ হলো, তিনি খুব নাম করেছেন। আমার কাহিনির চরিত্রে তিনি খাপ খেয়ে যাবেন।
অদ্রীশ: তা অবশ্য সত্যি। গ্রেট এসকেপ (১৯৬৩) যারা দেখেছেন, তারা স্টিভ ম্যাকুইনকে ভুলতে পারেন না। তার ব্যক্তিত্ব ক্যাসাব্ল্যাঙ্কা (১৯৪২) এর হামফ্রি বোগার্টের কথা মনে করিয়ে দেয়।
সত্যজিৎ: ঠিক কথা।
অদ্রীশ: কিন্তু ম্যাকুইন তো ব্যস্ত মানুষ। যদি পাওয়া না যায়?
সত্যজিৎ: সেক্ষেত্রে পল নিউম্যানকে নেব।
অদ্রীশ: কাহিনির নামকরণ হয়ে গেছে?
সত্যজিৎ: হ্যাঁ। ইংরেজিতে ‘দ্য এলিয়েন’। বাংলায় সম্ভবত ‘অবতার’। তবে ওদেশে ও নাম কীরকম নেবে, তার ওপর নাম পাল্টানো নির্ভর করছে।
অদ্রীশ: কাহিনিটা কী?
সত্যজিৎবাবু তখন পুরো কাহিনিটা শোনালেন। শূন্যে আঙুল দিয়ে একে একে বর্ণনা দিতে লাগলেন। নিমীলিত চোখে গল্প বলতে লাগলেন। মনে হল যেন সমস্ত দৃশ্যটা তিনি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন। খুঁটিনাটিসহ সেই বর্ণনা শুনতে শুনতে অদ্রীশ বর্ধনও যেন স্পষ্ট দেখতে পেলেন বাংলাদেশের এক অজপাড়া গাঁয়ে এসে নেমেছে এক বিচিত্র গ্রহযান। তাদের অ্যাডভেঞ্চার, পৃথিবীর ছোট ছোট প্রাণী সংখ্যা তৃতীয় বর্ষ দেখে তাদের বিস্ময়, মানুষের ওপর তাদের সহানুভূতি, আমেরিকানের আবির্ভাব ইত্যাদি গভীর দাগ কেটে গেল তার মনে।
অদ্রীশ: ছবিতে গ্রহান্তরের আগস্তুকদের সংখ্যা দ্বিত দেখাবেন?
সত্যজিৎ: নিশ্চয়।
সত্যজিৎবাবু ভিন গ্রহের সেই অতি উন্নত বাসিন্দাদের যে বর্ণনা দিলেন তা যেমনই বিস্ময়কর, তেমনই অভিনব। ফ্যান্টাসটিক মনে হলেও তা পুরোপুরি বিজ্ঞানসম্মত। সত্যজিৎবাবুর ইচ্ছায় এই বর্ণনা এখন গোপন থাকবে—জনসাধারণের সামনে প্রকাশ করা চলবে না। গল্পের ক্ষেত্রেও তিনি গোপনীয়তা অবলম্বন করতে চেয়েছেন, তাই লেখা হলো না।
অদ্রীশ: এসব তথ্য এখন প্রকাশ করা যাবে কি?
সত্যজিৎ: না। মাইক উইলসন খুবই হুঁশিয়ার মানুষ। যখন সময় হবে, তখন তিনি পাবলিসিটি শুরু করবেন।
অদ্রীশ: মি. ক্লার্ক তাহলে আপনার সঙ্গে কীভাবে আছেন?
সত্যজিৎ: খুব সম্ভব তিনি আমার সঙ্গে থাকছেন না। কেননা, গল্পটা তার সাহায্য ছাড়াই আমার লেখা হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে আমার লিবার্টি আছে, তবে উপন্যাস আকারে প্রকাশের সময় ক্লার্ক থাকবেন।
অদ্রীশ: গ্রহযানের খুঁটিনাটি দেখাবেন?
সত্যজিৎ: নিশ্চয়।
সত্যজিৎবাবু অতি উন্নত এক গ্রহের মহাকাশযানের যে বর্ণনা শোনালেন, তা শুনলে কল্পনাকেও থমকে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু পরে প্রেমেন্দ্র মিত্রও স্বীকার করেছেন সাত রকম মহাকাশযান সম্ভব। বিজ্ঞান প্রগতির মূল লক্ষ্যই হলো তাই। আমরা এখনও যা কল্পনাতেও আনতে পারিনি, অতিদূর গ্রহের বাসিন্দারা সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে। সত্যজিৎবাবুর ইচ্ছায়, গ্রহযানের ভেতরের এবং বাইরের বর্ণনা আপাতত প্রকাশ করা হবে না।
অদ্রীশ: ‘অবতার’ তো বাংলায় লেখা হচ্ছে?
সত্যজিৎ: হ্যাঁ। কিন্তু এই কাহিনিকে অবলম্বন করে আর্থার সি ক্লার্ক উপন্যাস লিখবেন এবং সে উপন্যাস বিলেত থেকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। কাহিনিকার হিসেবে আমাদের দুজনের নাম থাকবে।
অদ্রীশ: ভারতের সর্বপ্রথম ৭০ এমএম এর ছবি তাহলে আপনিই তুলছেন এবং সে ছবিও ভারতের সর্বপ্রথম সায়েন্স ফিকশন ফিল্ম?
সত্যজিৎ: হ্যাঁ। এ জন্যে ক্যামেরা আনা হবে বাইরে থেকে। মেকআপ ম্যানও আসবে বাইরে থেকে। স্পেসশিপ এক্সপার্টও বাইরে থেকে আসবেন।
অদ্রীশ: সে তো অনেক খরচের ব্যপার?
সত্যজিৎ: মাইক উইলসন তা দিতে রাজি। তিনি সিলোন থেকে ৪/৫টি ছবি তুলেছেন। প্রতিটি ছবিতে শতকরা পাঁচশো ভাগ লাভ করেছেন। তিনি বলছেন, টাকার জন্যে ভাববেন না। টাকা আমেরিকা থেকে আসবে। মনে হচ্ছে এদের সঙ্গে কাজ করে আমি আনন্দ পাবো। এত ভালো সেটআপ এর আগে আমি কখনও পাইনি। টাকাকড়ির কথা তো ছেড়েই দিলাম, এফিসিয়েন্সিও প্রচুর।
অদ্রীশ: ছবি কবে শুরু হবে?
সত্যজিৎ: মাইক উইলসনের ইচ্ছে এবছর সেপ্টেম্বর মাসে। এতগুলো যোগাযোগ যখন হয়ে গেল, ব্রান্ডোর সঙ্গে কথাবর্তা হয়ে গেল—তখন শুভস্য শীঘ্রম। কিন্তু বলেছিলাম, অশনি সংকেত (১৯৭৩) আর গুপী গাইন বাঘা বাইন (১৯৬৯) না তুলে সায়েন্স ফিকশনে হাত দেব না। কারণ, এ ছবি তোলার পর আমার ছবি তোলার ধারাটাই পাল্টে যাবে। মাইক উইলসনেরও তাই মত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্থির হয়েছে, সামনের বছরের (১৯৬৮) জানুয়ারিতে কাজ শুরু হবে। তা না হলে কতকগুলো অসুবিধের সম্মুখীন হতে হবে।
অদ্রীশ: অশনি সংকেত?
সত্যজিৎ: তার আগেই তোলা হয়ে যাবে।
অদ্রীশ: গুপী গাইন?
সত্যজিৎ: সামনের বছরের অক্টোবরে তুলব।
অদ্রীশ: আচ্ছা, মাইক উইলসন কি আমেরিকান?
সত্যজিৎ: তার জন্ম ইংল্যান্ডে। মার্চেন্ট নেভিতে যোগদান করে অনেক দেশ তিনি ঘোরেন। কানাডাতেও অনেককাল ছিলেন।
অদ্রীশ: ‘অবতার’ কে কি তাহলে আমেরিকান প্রোডাকশন বলা যাবে?
সত্যজিৎ: সেটা এখন ঠিক বলা যাবে না।
(সাক্ষাৎকার সেদিনের মতো স্থগিত রইল। সেই সময় সত্যজিৎবাবু চিড়িয়াখানা (১৯৬৭) ছবির শুটিং নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।)
দ্বিতীয় সাক্ষাৎকার
অদ্রীশ: ‘অবতার’ সম্বন্ধে সব ব্যবস্থাই কি সম্পূর্ণ করে এলেন?
সত্যজিৎ: মোটামুটি। তবে ছবি তোলার আগে আরেকবার হলিউডে যেতে হবে টেকনিশিয়ানদের নিয়ে।
অদ্রীশ: ছবি কবে উঠছে?
সত্যজিৎ: ১৯৬৮ সালের অক্টোবরে শুরু হবে। তার আগে মাস তিন-চারের প্রস্তুতির প্রয়োজন।
অদ্রীশ: মাঝে কি ছবি তুলবেন?
সত্যজিৎ: ২১ জুলাই থেকে উত্তমের বাকি শুটিংগুলো শেষ হলেই চিড়িয়াখানা শেষ হবে। অক্টোবরে হাত দেব গুপী গাইন বাঘা বাইন ছবিতে। রঙিন ফিল্ম। ফ্যান্টাসি৷ অশনি সংকেত বোধহয় পিছিয়ে গেল।
অদ্রীশ: ইংরেজ অভিনেতাদের মধ্যে পিটার সেলার্স তো চুক্তিপত্র সই করেছেন। আমেরিকান অভিনেতাদের মধ্যে মারলন ব্র্যান্ডোকে নিচ্ছেন না?
সত্যজিৎ: না। কারণটা আগেই বলেছি। প্রথমত, এ চরিত্রে তিনি খাপ খান না। দ্বিতীয়ত, ব্রান্ডোর টেম্পারামেন্ট আলাদা। ডিরেক্টরদের সঙ্গে হামেশাই গোলমাল হয়। আমাকে অবশ্য কলকাতায় উনি বলেছেন, বাজে ডিরেক্টরদের সঙ্গে ওরকম আমি করেই থাকি। তাহলেও তাকে নিচ্ছি না আরও একটা কারণে। একটা ছবিতে দুইজন টপ স্টার থাকলে অনেক অসুবিধা হয়।
অদ্রীশ: তাহলে কি স্টিভ ম্যাকুইন আসছেন?
সত্যজিৎ: না। দুবছরের মধ্যে তাকে ধরা যাবে না। তাই একজন উদীয়মান অভিনেতাকে নেব। হলিউডে তিনি নাম করতে শুরু করেছেন। খবরটা পাবো সাতদিনের মধ্যেই। এতে তার পক্ষে একটা ভালো ব্রেক হবে। আমাদেরও সুবিধে হবে।
অদ্রীশ: পিটার সেলার্স নিঃসন্দেহে শক্তিমান ও খ্যাতিমান অভিনেতা। বিদেশি বাজারে এবং যারা ইংরেজি ছবি দেখেন, তাদের কাছে ‘অবতার’ বা ‘এলিয়েনে’-এর আকর্ষণ এজন্য নিশ্চয় বৃদ্ধি পাৰে। কিন্তু যারা বাংলা ছবি দেখেন, তারা পিটার্স সেলার্সের নাম শোনেননি বললেই চলে।
সত্যজিৎ: তারা তো সত্যজিৎ রায়ের নাম শুনেছেন।
অদ্রীশ: টেকনিশিয়ানদের মধ্যে কাদের আপনি নিচ্ছেন?
সত্যজিৎ: ক্যামেরাম্যান সুব্রত মিত্র, আর্ট ডিরেক্টর বংশী চন্দ্রগুপ্ত। এদেরকে নিয়ে হলিউড যেতে হবে ছবি তোলার আগেই।
অদ্রীশ: ছবি কি ৭০ মিলিমিটারের বড় ক্যামেরায় উঠবে?
সত্যজিৎ: না। উঠবে ৩৫ মিলিমিটারের ছোট ক্যামেরায়। তাতে সুবিধে দুটো। প্রথমত, বড় ক্যামেরা নাড়াচাড়া করার হাঙ্গামা থাকছে না। দ্বিতীয়ত, ৭০ মিলিমিটারের ছবি দেখানোর সিনেমা হল পৃথিবীতে খুব বেশি নেই। তাই ছবি ৩৫ মিলিমিটারে উঠবে, তা থেকে খুব সহজেই প্রয়োজনমতো ৭০ মিলিমিটারের প্রিন্ট তৈরি করে নেওয়া যাবে। সবাই তাই করে।
অদ্রীশ: অনেকেই আশা করছিল, আপনি বিদেশি ক্যামেরাম্যান নেবেন।
সত্যজিৎ: সে অফার অবশ্য আমি পেয়েছি। এই তো সেই চিঠি। টাইপ করা নয়, নিজের হাতে চিঠি লিখেছেন হলিউডের টপ ক্যামেরাম্যান হ্যাসকেল ওয়েসলার। আমার যে কোনও ছবিতে তিনি কাজ করতে প্রস্তুত। এজন্যে কানাকড়িও গ্রহণ করবেন না।
অদ্রীশ: এ তো মস্ত খবর। আমাদের গর্বের বিষয়। আমার মনে হয় চিঠিখানা ফটোস্ট্যাট কপি করে ‘আশ্চর্য!’-তে ছেপে দেওয়া দরকার।
সত্যজিৎ: সেটা নিজের বড় পাবলিসিটি হয়ে যায়।
অদ্রীশ: তাহলে, মাইক উইলসন আপনাকে সর্বপ্রথম যে প্রস্তাব জানিয়েছিলেন সেটি প্রকাশ করার অনুমতি দিন।
সত্যজিৎ: কোথায় আছে সে চিঠি খুঁজে দেখতে হবে। তুমি পরে এসে নিয়ে যেও।
অদ্রীশ: ‘অবতার’ ছবিতে টাকা ঢালছে কে?
সত্যজিৎ: কলম্বিয়া পিকচার্স। সারা পৃথিবীতে পরিবেশনার ভারও ওদের। আমি আর মাইক উইলসন একটা কোম্পানি করেছি ‘অবতার’ তোলার জন্যে। এ ব্যবস্থা এশিয়ায় এই প্রথম।
অদ্রীশ: বাঙালি দর্শকদের জন্য আপনি তাহলে নামী অভিনেতা নিচ্ছেন না?
সত্যজিৎ: আমার সে রকম কোনও ডগমা নেই। যে চরিত্রে যাকে মানাবে, আমি তাকেই নেব। সে নতুনই হোক কি পুরোনো হোক। আমার প্রথম ছবি পথের পাঁচালীতে (১৯৫৫) আমি মনে করেছিলাম নতুন মুখের দরকার। তাই করেছি। সেই কারণে পুরো সিরিজটাতেই ব্যবস্থা রাখতে হয়েছে। দ্বিতীয় ছবি জলসাঘর (১৯৫৮) এই তো ছবি বিশ্বাসকে নিয়েছি। ওই চরিত্রে তিনিই ছিলেন উপযুক্ত অভিনেতা। আবার নায়ক (১৯৬৬) ছবিতে উত্তমের দরকার হয়েছিল।
অদ্রীশ: আবার কিছু ব্যক্তি প্রায়ই বলেন, শেষ পর্যন্ত সত্যজিৎবাবুকে উত্তম কুমারকেও নিতে হলো?
সত্যজিৎ: এখন আর তারা তা নিশ্চয় বলবেন না। তাছাড়া পাত্র-পাত্রী নির্বাচন সম্পর্কে আমার পদ্ধতি আমি আগেও জানিয়েছি। বাংলাদেশের দুএকটি পত্রিকা ছাড়া সব কাগজেই তা বেরিয়েছিল।
অদ্রীশ: বিলেত টেলিভিশনে সায়েন্স ফিকশন এসেছে?
সত্যজিৎ: এসেছে। গোটা দু-তিন রঙিন সিরিজ নিয়মিত চলছে।
অদ্রীশ: সায়েন্স-ফিকশন বই?
সত্যজিৎ: একটা দোকান দেখলাম শুধু সায়েন্স ফিকশন বই আর ম্যাগাজিনের জন্যে।
অদ্রীশ: কিছু নিয়ে এলেন?
সত্যজিৎ: ওজন বেড়ে যাবার ভয়ে আনতে পারিনি। হালকা বলে কয়েকটা পেপারব্যাক কিনেছি। তার মধ্যে আছে অ্যালফাভিল (১৯৬৫) ছবির চিত্রনাট্য। অনেকগুলো ফুলপেজ ফটোগ্রাফও আছে। পরে তুমি এর অনুবাদ ‘আশ্চর্য!’-তে বার করতে পার। যদিও বিষয়টি খুবই কঠিন তাহলেও কিছু পাঠকের ভালো লাগবে।